আইএমএফ’র আগাম বার্তা, প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:২৭ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার
২০১৯ ও ২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় আটের ঘরে। সরকারের বিনিয়োগ বান্ধব উদ্যোগ, রফতানি ও রেমিটেন্সের শক্তিশালী প্রবাহ এর প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার সকালে ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাষ দেয়া হয়।
বিশ্বের শক্তিশালী দুই অর্থনীতির (চীন ও আমেরিকা) দ্বন্দ্ব আর উন্নয়নের সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। যা স্পষ্ট হয়েছে তাদের এই আগাম বার্তায়।
আইএমএফ জানায়, এই দুই বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় আটের ঘরে। আর এটি সম্ভব হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মতো বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগ। সেইসঙ্গে বিশ্বমন্দার পরও রফতানি ও রেমিটেন্সের শক্তিশালী অবস্থান বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০১০ সাল থেকে এ দেশে ৮০ লাখ লোকের দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে এই অগ্রযাত্রার জন্য ৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয় প্রতিবেদনটিতে। প্রতি বছর এ খাতে রফতানি ১৬শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ তরুণ জনশক্তি রয়েছে, যারা দ্রুততর সময়ে নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের উদ্বুদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
পাশাপাশি, বাংলাদেশে ৬ লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। যাদের আয় দেশের মূল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেইসঙ্গে বিরাট জনগোষ্ঠী অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। এছাড়া, দেশের উদার করনীতি ও বিভিন্ন প্রণোদনা উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে।
দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা চতুর্থ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাশাপাশি, জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক অবস্থানে জনগণকে বিপুলভাবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং কৃষি উৎপাদনের বহুমূখীকরণের ফলেও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর বার্ষিক সভার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়।
২০১৯ সালে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ ছিল। প্রক্ষেপণে বলা হয়, গেল বছরের আর্থিক মন্দা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পারে বড় দেশগুলো। ফলে গতি আসতে পারে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে।
তবে প্রতিবেদনে আইএমএফ এর সতর্কবাণীও রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়- প্রবৃদ্ধির নিম্নহার এক ধরনের হলেও হারানো গতি ফিরে পাওয়া এক রকম হবে না। উৎপাদন খাতের সংকোচন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাসকেই মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান আলোচনায় আসে। পাশাপাশি, বিশ্ব মন্দার কবলে থাকা বড় দেশগুলোর উদার বাণিজ্যনীতির ব্যর্থতা এবং মুদ্রা পাচারের মতো অপরাধ ঠেকাতে না পারাও আলোচিত হয়।
আইএমএফ’র মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ জানান, বৈশ্বিক বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো অগ্রগতির ক্ষেত্রে এখনো বড় বাধা। যা কাটিয়ে উঠতে নীতি-নির্ধারকদের আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।