বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছবি এডিটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৬ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

ই-কমার্সের জনপ্রিয়তার কারণে যে কোনো ব্যবসায় একটি ছবির গুরুত্ব বেড়েছে হাজার গুণ। পণ্য বা সার্ভিসের ছবি অনলাইনে যত সুন্দর করে প্রকাশ করা হবে, ব্যবসার প্রসার হবে তত বেশি। তাই যুগের চাহিদার নিরিখে লোকাল ও গ্লোবাল মার্কেটে ইমেজ এডিটরের চাহিদা এখন শীর্ষে। আলিবাবা, অ্যামাজন, দারাজে ঢুকে যে ছবিগুলো দেখা যায়, তা কিন্তু ইমেজ এডিটিংয়ের মাধ্যমে এডিট করা। ইমেজ এডিটিংয়ের অর্থ হলো ইমেজকে পরিবর্তন করার কাজ। ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ কিংবা কালার কারেকশন বা ইমেজ রিটাচ থেকে শুরু করে ইমেজ ম্যানিপুলেশন- সবই ইমেজ এডিটিংয়ের কাজ। যে কোনো ইমেজকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য ইমেজ এডিটিংয়ের বিকল্প নেই। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ইমেজ এডিটিং তথা ক্লিপিং পাথ কাজের দারুণ চাহিদা রয়েছে।

হয়ে যান ইমেজ এডিটর
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, মাত্র একটি সফটওয়্যার আয়ত্ত করে ইমেজ এডিটর হওয়া সম্ভব। এই দারুণ সফটওয়্যারটির নাম ফটোশপ। এটি এমন একটি সফটওয়্যার, যা ব্যাপকভাবে রাস্টার ইমেজ এডিটিংয়ের জন্য ব্যবহূত হয়। অ্যাডোবি ফটোশপের টুলবক্স অত্যন্ত শক্তিশালী। ফটোশপ চালু করার পর বামদিকে খেয়াল করলেই দেখা মিলবে এই টুলবক্সের। বর্তমানে ফটোশপে প্রায় ৩০ রকম টুল রয়েছে। কাজ করার সুবিধার জন্য টুলবক্সকে ৬টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি টুলের আবার রয়েছে একাধিক সাব টুল।

ফিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ইমেজ এডিটিং
বর্তমান সময়ে স্বাধীন পেশা হিসেবে আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং অনেক জনপ্রিয়। সেই আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে ইমেজ এডিটিংয়ের রয়েছে বিশাল মার্কেট। বর্তমানে এ বিষয়ে দক্ষতা থাকলে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে দেশের সহস্রাধিক ক্লিপিং ইন্ডাস্ট্রিতেও রয়েছে প্রচুর কাজ করার সুযোগ। বড় বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, পাবলিশিং হাউস এমনকি মিডিয়াতেও একজন ইমেজ এডিটরের রয়েছে অন্য রকম কদর। দেশের মার্কেটে একজন ইমেজ এডিটর প্রাথমিক পর্যায়ে মাসিক ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে আয়ও বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক মার্কেটে এ কাজের রেট আরও বেশি। এক্সপার্ট হতে পারলে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

ইমেজ এডিটিংয়ে দক্ষতা থাকলে উদ্যোক্তা হয়ে নিজেই প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব। এ ছাড়াও মুক্ত পেশায় চাহিদা রয়েছে বিপুল। আন্তর্জাতিক মার্কেটে রিমোট জব বা ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকমসহ জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেসে রয়েছে হাজার হাজার কাজ। লোকাল মার্কেটেও যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করার ভালো সুযোগ আছে। সেক্টর ভিন্ন হলেও কাজ বা কাজের ধরন একই। যেমন- ক্লিপিং পাথ সার্ভিস, ইমেজ মাস্কিং সার্ভিস, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, ট্রান্সপারেন্ট ব্যাকগ্রাউন্ড, শ্যাডো সার্ভিস, ইমেজ রিসাইজিং, নেক জয়েন্ট সার্ভিস, জুয়েলারি রিটাচ, রাস্টার টু ভেক্টর, প্রডাক্ট মডেলিং প্রভৃতি।

ইমেজ এডিটিং কাজ বেশ সহজ। ব্রেইনস্ট্রমিং করতে হয় না। কাজের ধরনও পরিবর্তন হয় কম; মানে খুব বেশি গবেষণার প্রয়োজনও নেই এ সেক্টরে। খুব হাই কনফিগারেশনের কম্পিটারের প্রয়োজন নেই। ফটোশপ চালানোর মতো কনফিগারেশন থাকলেই চলবে। তবে এ সুবিধাগুলো তখনই পাওয়া সম্ভব, যখন কাজে দক্ষতা থাকবে। এ কথা সত্য, অনেক সময় একই ধরনের কাজে একঘেয়েমি আসতে পারে। এ পরিস্থিতি থেকে উঠে আসাও বেশ সহজ। কাজের পাশাপাশি ইমেজ এডিটিংয়ের অন্যান্য সেক্টরে দক্ষতা গড়ে তোলার মাধ্যমে। শেখা শুরু করাও সহজ। এখন তো তথ্যের সন্ধান করা খুব কঠিন কিছু নয়। ইউটিউব, গুগল, ফ্রি অনলাইন রিসোর্সের মাধ্যমে প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারেন। নিজে নিজে শেখার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রকৃত বিকাশ হবে তখনই যখন কোনো প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শেখা হবে। চাইলে অনেক পড়তে পারেন, রিসার্চও করতে পারেন, যা শিখছেন তা বাস্তবায়ন শুরু না করা পর্যন্ত এটি কখনোই শেখা পরিপূর্ণ হবে না।

একজন ভালো ইমেজ এডিটর হয়ে ওঠার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সে অবস্থান বজায় রাখার জন্য প্রচুর মানসিক শক্তিও লাগে। শীর্ষস্থানীয় ইমেজ এডিটর হতে হলে এ পরিশ্রম সারাজীবনই করতে হবে। আপনি যা করতে পারেন তা হলো প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে উন্নত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা। এ সম্পর্কে ইমেজ এডিটিংয়ে বিদেশি কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটির প্রধান নির্বাহী মনির হোসেন সমকালকে বলেন, ইমেজ এডিটিংয়ের কাজ খুবই সহজ। এটা শেখার জন্য খুব বেশি পড়াশোনা জানতে হবে, এমন নয়। নির্দিষ্ট ঘরানার প্রচুর কাজ রয়েছে মার্কেটপ্লেসে। শুধু দক্ষ হয়ে উঠতে পারলেই ইমেজ এডিটিংয়ের কাজ করে ভালো আয় করা সম্ভব। দেশে বর্তমানে অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইমেজ এডিটিংয়ের কাজ করছেন। দেশে এ রকম বেশ কিছু আইটি ফার্ম রয়েছে, যাদের কয়েকশ ইমেজ এডিটর রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান দেশে বসেই বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে কাজ করছে।