আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গু
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২৭ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার
নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়ানক হবে : স্বাস্থ্য সচিব
দেশে প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে। গতকাল চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ ৮৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন দুজন। এখন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য সচিব।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এর আগে রবিবার ৮৫৫ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪ জনে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৮৫৭ জনের মধ্যে ৫২৩ জন ঢাকার ও ৩৩৪ জন অন্যান্য জেলার বাসিন্দা। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬ হাজার ৩৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৯৩৮ জন। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ৯৬ জন। প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে রাজধানীর সরকারি কোনো হাসপাতালেই ডেঙ্গুর রোগীর জন্য বরাদ্দ শয্যা ফাঁকা নেই। তারপরও প্রতিদিন বহু রোগী আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর কোনোটিতেই শয্যা খালি নেই। কিন্তু আমরা রোগীদের ফেরত পাঠাতে পারি না। যেভাবেই হোক চিকিৎসা দিচ্ছি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে আয়োজিত এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক অবহিতকরণ ও মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, আমরা চাই না ২০১৯ সালের মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হোক। এজন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত ফ্লুইড সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। রোগী যদি মশারি না নিয়ে আসে, তাহলে হাসপাতাল থেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোকে বলেছি, দ্রুত হটস্পটগুলোতে অভিযানের ব্যবস্থা করেন। শুধু অভিযান করলেই হবে না, গণমাধ্যমে প্রচারের গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে বর্জ্যের জায়গায় কোনোভাবেই যেন পানি জমে না থাকে। ময়লাগুলো দ্রুত পয়ঃনিষ্কাশনে ব্যবস্থা নিতে হবে। আজকের ময়লা যেন আগামীকালের অপেক্ষায় না থাকে। ওয়াসার অনেক কাজ পড়ে থাকে। সেগুলোতে যাতে পানি জমে না থাকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে আমাদের অভিযান পরিচালনা করেও কিছু করতে পারব না। মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আশেপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। ডাবের পানি ডেঙ্গুতে খুবই জরুরি, কিন্তু ডাবের খোসা আমাদের জন্য সর্বনাশের কারণ। এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মিরপুরসহ যেসব এলাকা ডেঙ্গুর অন্যতম হটস্পট, সেখানকার রোগীদের জন্য মিরপুর লালকুঠি ও মহানগর হাসপাতালসহ কভিডের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হবে। যেহেতু সেগুলো এখন ফাঁকা, তাই সমস্যা হবে না। গতকাল দেশে মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৮৯ জন। মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪০২ জন এবং শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৩২ হাজার ৮৩২ জন। গতকাল করোনা শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ আর মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে থেকে সেরে উঠেছেন ৬৪৪ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫২ জনে। সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।