সাহসী সাংবাদিকদের জন্যই দূর্নীতি বিরোধী খবর প্রকাশ পাচ্ছে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:৪৬ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবে রোজিনা ইসলামের সংবর্ধনা
আজকাল রিপোর্ট
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সম্মানজনক ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া বাংলাদেশের সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সংবর্ধনা জানিয়েছে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব। এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের জন্য রোজিনা ইসলাম এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে তিনি এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
তার সংবর্ধনায় আয়োজিত নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখনো রোজিনার মতো সাংবাদিকরা আছেন বলেই সরকারী দূর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারী বিজ্ঞাপন না পেয়েও কোন কোন মিডিয়া পাঠকপ্রিয়তায় দায়িত্ব পালন করে চলেছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সরকারি নিগ্রহ ও কারাভোগ সত্ত্বেও সাহসিকতার সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করে দেশ, দেশের সাংবাদিক ও প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মুখ উজ্জ¦ল করেছেন। তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি সাহসী সাংবাদিকতায় অন্য সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে।
সংবর্ধনার জবাবে ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তাঁর প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা জানানোর জন্য সাংবাদিকসহ প্রবাসী জনসমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই কাজ করি এবং সততার সাথে আজীবন পেশাগত দায়িত্ব চালিয়ে যাবো। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ আমার দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার রোজিনা ইসলামসহ বিভিন্ন দেশের ৮ জন ব্যক্তির হাতে ২০২২ সালের ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন।
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে গত ১৯ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় রোজিনা ইসলামকে এই সংবর্ধনা জানান হয়। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও করেন আবু তাহের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আজকাল সম্পাদক ও আইবি টিভি’র সিইও জাকারিয়া মাসুদ, সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমদ, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক দেশবাংলা সম্পাদক ডা. সারোয়ারুল হাসান, প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, টিবিএন ২৪ এর সাংবাদিক সুলতানা রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট রানু ফেরদৌস, শেলী জামান খান, লেখক রহমান মাহবুব প্রমুখ।
মনজুর আহমদ বলেন, সাংবাদিকতা সবসময়ই সাহসী কাজ। তাদের দায়িত্বই হচ্ছে দূর্নীতির বিরুদ্ধে লেখা। আগে সাহসী সাংবাদিক বলতে কিছু শুনিনি। বাংলাদেশে বিরাজিত আজকের পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেই দূর্নীতির বিরুদ্ধে লিখে সাহসী সাংবাদিক হতে হয়।
হাসান ফেরদৌস বলেন, সাংবাদিকদের মূল ও প্রথম দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে সত্যকে তুলে ধরা, ক্ষমতাসীন মানুষদেরকে সত্য কথা জানানো। আর ক্ষমতাসীনরা সত্য কথা পছন্দ করে না। তারা নিজেদেরকে ‘ভালো’ বলা পছন্দ করে।
ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান বলেন, দেশের ন্যায় প্রবাসেও অনিয়ম-অনৈতিকতা চলছে। এসবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়া দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাটির নির্বাচনে ভোটার বানানোও এক ধরনের অপরাধ, অন্যায়।
ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, সৎ আর সাহসী সাংবাদিকতা সহজ নয়। এমন সাংবাদিকদের ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়। ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ রিপোর্টের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। সত্য বলা আর অধিকার প্রতিষ্ঠার মূল্যায়ন এখনো আছে বলেই রোজিনা ইসলামের মতো সাংবদিকরা ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ পায়। তাঁর এই প্রাপ্তি বাংলাদেশে সাহসী সাংবাদিকতার পথকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জাকারিয়া মাসুদ বলেন, রোজিনা ইসলাম আরো বড় বড় রিপোর্ট করে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবেন এটাই আমার বিশ্বাস।
ইব্রাহীম চৌধুরী তার বক্তব্যে রোজিনা ইসলামকে সাহসী সাংবাদিকতার নিবেদিত কর্মী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দিন। রোজিনা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর এ কাজ সাংবাদিকদের জন্য প্রেরণা হয়ে কাজ করবে।
সুলতানা রহমান বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আমার অনেক পুরনো বন্ধু। আমরা এক সাথে একই কাগজে কাজ করেছি। তাঁর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে আমরা সবাই খুশি। পেশাগত বাধা রোজিনাকে আরো বেগমান করে তুলেছে, বাঁধা ভাঙার আনন্দ রোজিনার প্রধান শক্তি।
সংবর্ধনার জবাবে রোজিনা ইসলাম বলেন, আমার মামলাটি ছিলো ‘রাষ্ট্র বনাম রোজিনা ইসলাম’। এমন একটি মামলা থেকে ফিরে এসে কাজটি চালিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ হলেও আজকের অ্যাওয়ার্ড আমাকে আমার দায়িত্বপালনে অনপ্রেরণা জোগাবে। তিনি বলেন, আমি আজীবন সাংবাদিকতা করে যাবো, কোন বাধাই আমাকে আটকাতে পারবে না। তার বিপদের সময় দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকরা পাশে দাঁড়িয়ে তাকে যে সাহস যুগিয়েছেন এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবু তাহের সাহসী সাংবাদিকতায় অ্যাওয়ার্ড প্রদান করায় ইউএস ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এমন অ্যাওয়ার্ড সকল সাহসী সাংবাদিককে অনুপ্রাণিত করবে।
সবশেষে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে রোজিনা ইসলামের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মাহমুদ, শাহেদ আলম, টাইম টিভির অন্যতম পরিচালক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব-এর যুগ্ম সম্পাদক মমিন মজুমদার, কোষাধ্যক্ষ রশীদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সোলায়মান, নিউইয়র্ক কাগজ’র সম্পাদক আফরোজা ইসলাম, লেখক শেলী জামান খান, রওশন হক প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।