মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভবনের মালিকানা কার?

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১৮ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার

সংকটের আবর্তে জালালাবাদ এসোসিয়েশন : সম্পাদক মইনুলকে নোটিশ

 

আজকাল রিপোর্ট
গভীর সংকটে এখন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংগঠনের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। নিউইয়র্কের প্রায় লক্ষাধিক প্রবাসী সিলেটবাসীর প্রাণের সংগঠন এটি। গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য প্রশংসিত এই ঐক্যবদ্ধ সংগঠনটি কয়েক যুগ ধরে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু এবার নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস না পেরোতেই সংগঠনে অন্তর্কলহ সৃষ্টি হয়েছে। একটি ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে সংগঠনে অসন্তোষ ধূমায়িত হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে ভবনটির মালিকানা কার? এই ইস্যুতে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে করা হয়েছে শো’কজ। প্রতিক্রিয়ায়  তিনি শো’কজকে অবৈধ ও অকার্যকর বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট কমিউনিটিতে বিষ ছড়াচ্ছেন।
সংগঠনের ভবন কেনাকে কেন্দ্র করে সংগঠন এখন বিভক্ত। কার্যকরি কমিটির অধিকাংশ কর্মকর্তাকে নিয়ে একাংশের নেতুত্ব দিচ্ছেন সভাপতি বদরুল খান। তার সঙ্গে রয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজমল হোসেন কুনু, এম এম শাহিন, তোফায়েল চৌধুরী ও এডভোকেট নাসির উদ্দীন। অন্যদিকে সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলামকে সর্মথন দিচ্ছেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি শওকত আলী, মইনুল হক চৌধুরী, সাবেক সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজ ও  ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী।
নিউইয়র্কে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের জন্য নিজস্ব একটি ভবনের দাবি ও প্রত্যাশা বৃহত্তর সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের উদ্যোগে এস্টোরিয়ায় ্একটি দুই ফ্যামিলির বাড়ি কেনা হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে জালালাবাদ ভবন। কিন্তু বাড়িটি কেনা হয়েছে জালালাবাদ ইউএসএ ইনক করপোরেশনের নামে। বাড়িটি ক্রয়কালে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র ফান্ড ব্যবহার করা হয়েছে। গত রোববার ৮ জানুয়ারি ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিলেটবাসী উপস্থিত ছিলেন। ছিল উৎসবমুখর পরিবেশও। কমিউনিটির বেশ কিছু নেতৃবৃন্দও ছিলেন উপস্থিত। তবে এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দীনসহ কার্যকরি কমিটির অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। তারা জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বদলে জালালাবাদ ইউএসএ ইনকের নামে বাড়ি কেনা এবং সেই বাড়ির নাম জালালাবাদ ভবন রাখাকে মেনে নিতে পারছেন না।   
এর একদিন পরই ১০ জানুয়ারি বুধবার  সংগঠনের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৬ এর ধারা ৭(ক),৯(গ) ও ১৬(৬) লংঘনের অভিযোগে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা তাদের সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। নোটিশে সংগঠনের অর্থ তহবিলে ফেরত না দেয়া ও জালালাবাদ ইউএসএ ইনক করপোরেশন এর নামে কেনা বাড়িকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ’র কার্যালয় হিসেবে প্রচারের জন্য কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।  
বদরুল খানের নেতৃত্বাধীন অংশের প্রচার ও দফতর সম্পাদক ফয়সাল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদপত্রে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মইনুল ইসলামকে ‘শো কজ’ করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলো।  গত  ৯ জানুয়ারি সোমবার ওজন পার্কের  মমোস পার্টি হলে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার কার্যকরী কমিটির মাসিক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতি বদরুল খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত  ছিলেন সহ সভাপতি এম ডি লোকমান হোসেন, সহ সভাপতি সফিউদ্দিন তালুকদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলিম, সাহিত্য সম্পাদক হোসেন আহমদ, ক্রীড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক ফয়সাল আলম, কার্যকরী সদস্য শামীম আহমদ ও কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মানিক।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর  অনুষ্ঠিত সংগঠনের কার্যকরী পরিষদ ও  ট্রাস্টি বোর্ডের যৌথ সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’র নামে বাড়ি ক্রয় করেছেন। এ জন্য  সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় অসাংবিধানিক ও অগঠনতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠনের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করেছেন তিনি। সংগঠনের উত্তোলনকৃত সমুদয় অর্থ ফেরত দেবার জন্য তাকে বলা হয়। অর্থ একাউন্টে জমা না দিয়ে তার কেনা ভবনকে কার্যকরী কমিটি বা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমতি ছাড়াই জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কার্যালয় বা ভবন হিসাবে প্রচার দেয়া শুরু করেন। সংগঠন বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায় কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের  বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা ১৬ জানুয়ারি ও সংগঠনের সাধারণ সভা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।  এছাড়া ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন ও ইফতার মহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
গত বুধবার রাতে এ ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ড্রাইভিং এ থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেন নি। তার অনুরোধে টেক্সট মেসেজ পাঠানোর পর তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, কারন দর্শানোর নোটিশ ‘ইনভ্যালিড’। আমি একজন নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। ট্রাস্টিবোর্ড কখনোই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে লিখিতভাবে দেয়নি। তারা এক মধ্যরাতে অন্ধকার বেজমেন্টে আমাকে তা বলেছিল। আমি তা অনেককেই জানিয়েছিলাম। দয়া করে সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজের সাথে কথা বলুন। কারণ ভবনটি কেনা হয়েছিল গত কমিটির মাধ্যমে। আমি মইনুল চৌধুরী ও শেফাজের সাথে লিগাল এগ্রিমেন্ট ও রিলিজপত্র স্বাক্ষর করেছিলাম। আমি এটা করেছি শুধু ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের জন্য। যখনই আমি ৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের মর্টগেজ ও অন্যান্য খরচের দায় থেকে মুক্ত হবো তখনই ক্রয়কৃত ভবনটি জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র কাছে ট্রান্সফার করতে বাধ্য থাকব।
সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম আরও বলেন, এই ভবনটির দাম এখন ১.৫ মিলিয়ন ডলার। আমার বোধগম্য হচ্ছে না বর্তমান সভাপতি কেন কমিউনিটি, কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডে  এই ভবনের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াচ্ছেন। আমি কোনভাবেই এই মুল্যবান সম্পদ হাতছাড়া হতে দেব না। এসোসিয়েশনের সাধারন সদস্যরাই এই ভবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ৫ জনের গ্রুপে কাজ হবে না। এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্টের খারাপ নেতৃত্ব। সবাই জানেন, ফিলাডেলফিয়ার ভবন তিনিই বিক্রি করেছিলেন। তিনি সবাইকে রেখেছিলেন অন্ধকারে। তিনিই বিনা প্রয়োজনে এস্টোরিয়ায় অফিস ভাড়া করে অর্থ অপচয় করেছেন। সভাপতি বদরুল খানের উদ্দেশে মইনুল ইসলাম বলেন, আপনি কি এমন একটি প্রোপার্টি কিনতে পারবেন? আমি নিশ্চিত, তা আরও ৩০ বছর লাগবে। ঘৃনাকারিরা  (হেটারস) অফিসটি দেখে যান । তারপর বিরোধিতা করুন ।