গভীর সংকটে জালালাবাদ এসোসিয়েশন
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১৩ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার
সম্পাদক মইনুলের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?
আজকাল রিপোর্ট
ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সংকট আরও জটিল হচ্ছে। অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে ৬ ফেব্রুয়ারি আহুত সাধারণ সভা। জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেবার শেষ তারিখ ছিল ২৭ জানুয়ারি। বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোন জবাব সভাপতি বদরুল খান বা কার্যকরি কমিটির কোন সদস্য পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে মইনুল বলছেন, তিনি জবাব দিয়েছেন। বদরুল খান আজকালকে বলেন, সংগঠনের ঠিকানায় কোন জবাব পাইনি। ই মেইলেও তা দেখিনি।
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সংবিধান অনুসারে কোন সাধারণ সভা ডাকতে হলে ৩০ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। সংগঠনের এক কর্মকর্তা আজকালকে বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি আহুত সভায় ৩০ দিন সময়ের ঘাটতি ছিল। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার এই কারণে তসাধারণ সভা স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে এসোসিয়েশনের শক্তিশালী বডি হচ্ছে ‘ট্রাস্টি বোর্ড’। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র অনুসারে কোন বড় ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড যৌথভাবে নিয়ে থাকে। দুই বছরের জন্য ট্রাস্টিবোর্ড গঠিত হলেও নতুন বোর্ড গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের রয়েছে। বদরুল-মইনুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি গঠিত হবার পর নতুন ট্রাস্টিবোর্ড গঠিত হয়নি। পুরাতন ট্রস্টি বোর্ডই বহাল রয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা হলেন আজমল হোসেন কুনু, এম এম শাহিন, তোফায়েল চৌধুরী ও এডভোকেট নাসির উদ্দীন।
এদিকে আগামী রোববার ৫ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের কার্যকরি কমিটি বৈঠকে বসছে। এ বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট। এ সভার প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে সাধারণ সম্পাদককে দেয়া শো’কজের জবাব না পাওয়া ও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কমিটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, শো’কজের জবাব না পাওয়া গেলে গঠনতান্ত্রিক পন্থায় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এতে সাধারণ সম্পাদককে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তও হতে পারে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সাধারণ সভায় সন্মানিত সদস্যরা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শংকাতর। তবে কোন ব্যক্তি গঠনতন্ত্রের উর্ধ্বে নয়। এছাড়াও সংগঠনের ট্রাস্টিবোর্ড ও সিলেটের মুরুব্বিদের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তি বলেন, এজিএম-এর আগেই মইনুল সাসপেন্ড হতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে একজনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তিনি বা প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতাবলে সাধারণ সভা ডাকবেন।
সংকটের মূল কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে, সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলাম নতুন একটি করপোরেশন ‘জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’র ’ নাম দিয়ে এস্টোরিয়ায় বাড়ি কিনেছেন। এ বাড়ি কিনতে তিনি জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ৩ লাখ ডলারের বেশি অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বাড়িটির নাম দিয়েছেন জালালাবাদ ভবন। বলছেন, এটিই জালালাবাদ এসাসিয়েশনের ভবন ও কার্যালয়। যদিও বাড়িটির ক্রয় সংক্রান্ত দালিলিক কাগজপত্র মইনুল ইসলামের নামে। তবে তিনি বলছেন, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ৭ লাখের মতো আর্থিক দায় দেনা তাকে মিটিয়ে দিলে মালিকানা ট্রান্সফার করে দিবেন। তার প্রতিপক্ষরা বলছেন, ভবনটি যদি জালালাবাদ ইউএসএ ইনক এর নামে কেনা না হয়, তা’হলে মইনুল কিভাবে জালালাবাদ ভবন নাম দিলেন। এটাতো ব্যক্তির খেয়াল খুশি মতো হতে পারে না। নিজ নামে এই বাড়ি কিনতে তিনি সংগঠনের ৩ লাখ ডলার তুলে ফেলেছেন। মইনুল বলছেন, আমি যা করেছি গত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শ অনুযায়ীই করেছি। তাদের সাথে আমার ডিড রয়েছে, এটি হবে জালালাবাদ ভবন।
এ ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্নজন বিবৃতি দিচ্ছেন। সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও এম এ কাইয়ুম জালালাবাদ ভবন কেনায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে উভয় পক্ষকে একসাথে বসে বিরোধ নিষ্পত্তির আহবান জানিয়েছেন তারা। এদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মইনুল ইসলাম যখন কোষাধ্যক্ষ ছিলেন তখন তিনি কার্যকরি কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই জালালাবাদ এসোসিয়েশনের একাউন্ট থেকে আড়াই লাখ ডলার উত্তোলন করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সভাপতি বদরুল খানের সর্মথকরা।
‘জালালাবাদ ভবন’ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র বাড়ী না : অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন নিউইয়র্কের জালালাবাদ অ্যাসোসিশন অব ইউএস’র বিগত কমিটির অনুমোদন ছাড়াই সংগঠনের সাবেক সভাপতিসহ তিন ব্যক্তির যোগসাজসে ব্যাংক থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৬ ডলার উত্তোলন করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান। গত ২৮ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোঁরায় সংগঠনের কার্যকরি কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি বদরুল হোসেন খান বলেন, নিউইয়র্কের তথাকথিত ‘জালালাবাদ ভবন’ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র ভবন বা বাড়ী না। উক্ত বাড়িটি কারণ দর্শাও নোটিশপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের কেনা। জালালাবাদ ইউএসএ ইনক নামের একটি করপোরেশন গঠন করে নিজে এ বাড়িটি তিনি কিনেছেন। এ বাড়ি ক্রয়কালে মইনুল সংগঠনের একাউন্ট থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৬ ডলার সরিয়ে নিয়েছেন। সংগঠনের তহবিল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে অসাংবিধানিক ও অগঠনতান্ত্রিক কাজ তিনি করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে সভাপতি আরো বলেন, ২০২০ সালে মইনুল সংগঠনের তহবিল থেকে আড়াই লাখ ডলার বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম এ আজিজের ‘কোর কনস্ট্রাকশন গ্রুপের’ একাউন্টে ট্রান্সফার করেছিলেন। অথচ সংগঠনের সংবিধানে রয়েছে ৫ হাজার ডলারের বেশি তহবিল থেকে তুলতে হলে কার্যকরি কমিটিসহ ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি লাগে। মইনুলের এইসব অসাংগঠনিক কাজের অংশীদার সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল ও সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজ। সংগঠনের অর্থ ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবহার করে তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে অমান্য করেছেন বলে এক প্রশ্নের জবাবে বদরুল খান বলেন।
তিনি বলেন,তাদেরকেও আগামী ৬ ফ্রেব্রুয়ারির সাধারণ সভায় সকল অনিয়ম ও অগঠনতান্ত্রিক কর্মকান্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সাধারণ সদস্যরাই তাদের ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সম্প্রতি সাধারণ সম্পাদকে করা কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বদরুল খান বলেন, আমরা সেই কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব এখনও পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে কার্যকরী কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির ১৬ জন সদস্যের মধ্যে যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন তার হলেন,সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন লুকু, শফিউদ্দিন তালুকদার, সহকারি সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম, পাবলিসিটি সেক্রেটারি ফয়সল আলম, আইন বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দীন, ক্রিড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, সমাজ কল্যান সম্পাদক জাহিদ আহমেদ খান ও কার্যকরি কমিটির সদস্য শামীম আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিম।