নিরাপত্তার অভাবে নিউইয়র্ক ছাড়ছে আশ্রয়প্রার্থীরা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:৫২ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার
নিরাপদ জীবনের সন্ধানে কানাডার পথে বহু ইমিগ্রান্ট
আজকাল রিপোর্ট
আশ্রয়ের সন্ধানে নিউইয়র্কে আসা এসাইলাম প্রার্থীরা এখন এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওয়াকেবহাল মহল মনে করছেন, তারা নিউইয়র্ক সিটি থেকে পালাচ্ছে। সীমান্ত পার হয়ে তারা আশ্রয় প্রার্থনা করছে পার্শ্ববর্তী দেশ কানাডায়। নিরাপদ ও উন্নত জীবনের সন্ধানে তাদের এই নতুন অভিযাত্রা।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছেন, সীমান্ত পেরিয়ে নানা দেশ থেকে আসা এইসব আশ্রয়প্রার্থীরা চেয়েছিল নিরাপদ ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটির ক্রাইম, ড্রাগ ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশ তাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাদের ধারণা, ছেলেমেয়েদের নিউইয়র্ক সিটিতে ভালোভাবে গড়ে তোলা যাবে না। ড্রাগের ছোবলে পারিবারিক নিশ্চয়তা ও শান্তি ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তারা মনে করছে, কানাডায় সামাজিক সুবিধা বেশি ও নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে অধিক নিশ্চিত। তাই অনেকেই সিটির দেয়া আশ্রয়স্থল ত্যাগ করে ছুটছেন কানাডার দিকে।
আশ্রয়প্রার্থী যারা চলে যেতে যাচ্ছেন সিটি থেকেই তাদেরকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদেরকে দেয়া হচ্ছে টিকেট। ম্যানহাটনের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে কর্তব্যরত ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যরা তাদের টিকেট প্রদান করছে। তাদের সবাই আপস্টেটের কানাডার সীমান্ত সংলগ্ন শহরগুলোর উদ্দেশে বাসে উঠছে।
নিউইয়র্ক পোস্টের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভেনিজুয়েলার নাগরিক রেমন্ড পেনা তার পরিবার নিয়ে গত রোববার ভোর চারটায় আপস্টেটের প্লাটসবার্গ শহরে এসে পৌঁছেছেন। শহরটি কানাডার সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ মাইল দুরে। পেনা পোস্টকে জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের পোর্ট অথরিটি বাস স্টেশনে মিলিটারিরা তাদের ফ্রি টিকেট দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের উন্নত জীবনর আশায় কানাডা যাচ্ছি। ড্রাইভারদের তথ্যানুসারে প্রতিদিন ৫টি বাস নিউইয়র্ক সিটি থেকে প্লাটসবার্গে যায়। গড়ে ১০০ মাইগ্রান্ট এই সব বাসে সেখানে নামছে। সেখান থেকে তারা সরাসরি চলে যায় কানাডার সীমান্তে। তারপর সেখানে শুরু হয় তাদের আশ্রয় প্রার্থনার দ্বিতীয় যুদ্ধ। আমেরিকায় প্রবেশ করতে তারা প্রথম দফায় এমন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মেক্সিকো হয়ে তারা প্রবেশ করেছিল স্বপ্নের আমেরিকায়। এখন আবার আর এক স্বপ্নের পথে তাদের এগিয়ে চলা।
এদিকে সিটি হলের একটি দায়িত্বশীল সুত্র নিশ্চিত করেছে, কোন আশ্রয়প্রার্থী সিটি থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইলে তাদের রিটার্ন টিকেট দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মেয়র এরিক এডামসের প্রশাসন বিভিন্ন কোম্পানীকে অর্থ প্রদান করেছে। মাইগ্রান্টদের সিটি ত্যাগে বেশ কিছু ক্যাথলিক গ্রুপ ও নন প্রোফিট সংস্থা সাহায্য করছে। ক্যাথলিক চ্যারিটি কমিউনিটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, কোন মাইগ্রান্ট যদি অন্য সিটিতে রিলোকেট করতে চায় তবে তাদের অর্থসহ অন্যান্য সহায়তা করা হচ্ছে।
আশ্রয়প্রার্থী সলজারমো’র ভাষায়, আমি নিউইয়র্কে এসেছিলাম আমার কন্যার ভবিষ্যত চিন্তা করে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই দেখলাম এখানকার নিরাপত্তাহীন জীবন ও সর্বত্র হোমলেস পিপল। অনেকেই আমাদের দেখে চিৎকার করে। কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। আমি কানাডা যাচ্ছি নিরাপত্তা ও আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে।
গত এক বছরে টেক্সাস সীমান্ত হয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে আসা প্রায় ৩৫ হাজার মাইগ্রান্ট আশ্রয় নিয়েছে। যাদের অধিকাংশই এসেছে টেক্সাসের গভর্ণর অ্যাবোটের পাঠানো বাসে করে। সিটি কর্তৃপক্ষ এ বিপুল সংখ্যক মাইগ্র্যান্টকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।