বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াল

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৫৩ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার


আজকাল ডেস্ক
তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই দেশে মোট ২০ হাজার ২৯৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারীরা। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে রয়েছে তুরস্কের ১৭ হাজার ১৩৪ জন ও সিরিয়ার তিন হাজার ১৬২ জন। এ ছাড়া দুই দেশে আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ভূমিকম্পে সিরিয়ায় ৩ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ১ হাজার ২৬২ জন এবং বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ১ হাজার ৯০০ জন রয়েছে। দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে সিরিয়ায়। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রচ- ঠান্ডায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আফটার শকের শঙ্কাও রয়েছে। ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মানবিক সংস্থাগুলোর সামনে এখন তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ আসছে। ধ্বংসস্তূপের কোথাও কোনো প্রাণের সন্ধান পাওয়ামাত্র উদ্ধারকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে উদ্ধার অভিযান চালান। তুরস্কের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে।
চারদিকে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ। ধ্বংসস্তূপে এখনো প্রাণের সন্ধানে জোরদার অভিযান চলছে। সময়ের সঙ্গে লড়াই করছেন উদ্ধারকর্মীরা। কারণ, সময় যত পার হচ্ছে, জীবিত মানুষ উদ্ধারের আশা ততই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত দুই দেশকে বিশ্বের অন্তত ৬০টি দেশের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ভূমিকম্পের পর তুরস্ক-সিরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে উদ্ধারকারী দলসহ মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ, ইইউ, ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান, ইরাক, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সাহায্য পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকজন দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য তারা নানা জায়গায় ছুটছেন। যাদের স্বজন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা, তাদের অসহায়ত্ব সবচেয়ে বেশি।
তাদের কেউ কেউ বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে স্বজনদের উদ্ধারের আকুতি তারা শুনতে পারছেন। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছেন না। এছাড়া তাদের সাড়াশব্দও ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার।

 


উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানে আহত ১৬ শিশু
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের আরেক ছবি সবার চোখ যেন ভিজিয়ে দিল। দেশটির কাহরামানমারাস প্রদেশে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ শিশুদের বাবা-মা বা কোনো স্বজনের পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য নিজেকে বহনকারী বিমান ছেড়ে দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ বিমানে করে ওই শিশুদের সেখান থেকে রাজধানী আঙ্কারায় দ্রুত নিয়ে গিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বুধবার এ প্রদেশ পরিদর্শনে যান। এ সময় ওই শিশুদের সম্পর্কে জানার পর তিনি দ্রুত তার নিজের বিমানে কওে তাদেও নিয়ে এসে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন।
গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা যায়, বিমানের ভেতরে কয়েকজন নারী ও পুরুষ কম্বলে জড়িয়ে শিশুদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছেন। আঙ্কারার বিমানবন্দরে দেশটির পরিবার ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ শিশুদের গ্রহণ করা হয়। সেখান থেকে সরাসরি তাদের এতলিক সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের স্ত্রী এমিনে এরদোয়ান হাসপাতালে বুধবারই শিশুদের দেখতে যান। চাপা পড়া ভবনের নিচে তাদের অনেকটা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। দুয়েকজন শিশুর শরীরে সামান্য আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে তারা সবাই এখন বেশ ভালো আছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।