রোববার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩১   ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুবাইয়ে পলাতক খুনের আসামীর সোনার দোকান উদ্বোধন করেছেন সাকিব

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:০২ এএম, ১৮ মার্চ ২০২৩ শনিবার

আবারও বিতর্কে ক্রিকেট তারকা

আজকাল ডেস্ক
দুবাইয়ে একটি সোনার দোকান উদ্বোধন করে আবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ক্রিকেটের উজ্জ্বল তারকা, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। সোনার দোকানটি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া খুনের মামলার একজন আসামীর বলে জানা গেওেছ। এ ঘটনায় সাকিবকে নিয়ে যেমন বিতর্ক  উঠেছে তেমনি প্রশ্ন উঠেছে কেমন করে খুনের মামলার একজন পলাতক আসামী দুবাইতে এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন?
দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন হয়েছে গত ১৫ মার্চ। আরাভ খানের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন সাকিব আল হাসান। তবে সাকিব মঞ্চে ওঠেননি এবং মাত্র দশ মিনিট থেকেই চলে যান। এ ঘটনা নিয়ে ডয়েচে ভেলের খালেদ মুহিউদ্দীন এক সংবাদভাষ্যে লিখেছেন, সাকিব আল হাসান চলে যাওয়ার পর আরাভ খান তার দোকানের ক্রেতাদের সাকিব আল হাসানের সই করা জার্সি ও ব্যাট উপহার দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।
সংবাদ ভাষ্যে আরাভ খান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন খালেদ মুহিউদ্দীন। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খান এখন ভারতীয় নাগরিক হলেও তার আসল পরিচয় তিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার ছেলে রবিউল ইসলাম। চার বছর আগে ঢাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের আসামী হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে এই আরাভ খানের ছবি দেখে পুলিশ সনাক্ত করতে পারে দুবাইয়ের এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী আসলে পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যার আসামী রবিউল ইসলাম।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খানের হত্যাকান্ডের পর পালিয়ে ভারতে চলে যান রবিউল ইসলাম। তখন তার বয়স ছিল ৩০। সেখানে তিনি বিয়ে করেন এবং ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। সেই পাসপোর্ট দিয়েই তিনি পাড়ি জমান দুবাইয়ে। এখন তিনি দুবাইয়ের একজন বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
কয়েক দিন আগে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার নম্বর ৬৫১০। আরো চার-পাঁচটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।  পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিং পুল ও বাগান সহ তার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। সেখানে মাঝে মাঝে মায়াবি হরিণ জবাই করে বাংলাদেশিদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াচ্ছেন তিনি। বাগানে চাষ করেছেন বাংলাদেশি সব্জি। তার রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি। আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি সোনা দিয়ে বানানো হয়েছে বাজপাখির আদলে লোগো, যা তৈরিতে খবচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
ওই ফেসবুক পোস্ট দেখে অনেকেই চিনে ফেলেন তিনি বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার আসামী রবিউল ইসলাম। একজন ফেরারি আসামী দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, পুলিশের একজন সাবেক উর্ধতন কর্মকর্তার টাকায় দুবাইয়ে সোনার ব্যবসা শুরু করেছেন রবিউল ইসলাম।
পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমতউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে ঢাকার বনানীতে একটি বাড়িতে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মামুনকে ফাঁদে ফেলে বনানীর ওই বাসায় ডেকে নেয়া হয় এবং তাকে বেঁধে স্কচ টেপ দিয়ে মুখ আটকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে গাজিপুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ এই মামলায় রহমতউল্লাহ এবং রবিউল ইসলাম ওরফে আপন, ওরফে সোহাগ, ওরফে হৃদয়, ওরফে হৃদি সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেখানে রবিউল ইসলামকে পলাতক উল্লেখ করা হয়। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
এই মামলা চলাকালে আর এক প্রতারণার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন খালেদ মুহিউদ্দীন। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউল ইসলামের নামে একজন আত্মসমর্পন করেন আদালতে। আদালত তাকে জেলে পাঠান। নয় মাস কারাবাসের পর ওই ব্যক্তি জানান, তিনি রবিউল ইসলাম নন, তার নাম আবু ইউসুফ। আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে ডিবি পুলিশ জানতে পারে রবিউলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান। আর রবিউলের নামে আত্মসমর্পনকারী ব্যক্তি আবু ইউসুফের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার আইনপুর গ্রামে। তার বাবা নূরুজ্জামান।
খালেদ মুহিউদ্দীন প্রশ্ন রেখেছেন, পুলিশ হত্যায় অভিযুক্ত একজন কি করে দেশ থেকে পালিযে যেতে পারেন? কারা তাকে সহযোগিতা করেছেন? নকল রবিউল সাজিয়ে অন্য একজনকে আদালতে আত্মসমর্পন করানোর পেছনেই বা কারা ছিল? সীমানা পার হতে পারলেই কি ভারতের নাগরিক হওয়া যায়? দুবাইতে এত টাকা নেয়া যায় কিভাবে? আরো যারা বাংলাদেশের নাগরিক তারাই বা টাকা নিয়ে যাচ্ছেন কিভাবে? সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আরাভ জুয়েলার্সের হয়ে কে যোগাযোগ করেছিল?