রাহুলই এখন ভারতের মূল রাজনৈতিক ইস্যু!
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২৬ এএম, ২৭ মার্চ ২০২৩ সোমবার
ভারতে এক ফৌজদারি মানহানির মামলায় বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর কারাদণ্ড এবং তার এমপি পদ হারানোর ঘটনা অনেকটা হঠাৎ করেই দেশটির রাজনীতিতে এক বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর প্রতিবাদে শনিবার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন, পাঞ্জাবে হয়েছে রেল অবরোধ। ভারতের ১৪টি বিরোধী দল, যাদের মধ্যে অন্য প্রশ্নে খুব একটা সহমত হতে দেখা যায় না, তারাও রাহুল গান্ধীর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এক হয়েছে।
এছাড়া এমপির পদ হারানোর পর শনিবার প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন রাহুল গান্ধী, আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বিজেপিও। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোকসভা ভোটের যখন বছর খানেক বাকি, তখন এ ঘটনার ভেতর দিয়ে রাহুল গান্ধীই মূল রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছেন।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, গুজরাটের এক আদালতে ফৌজদারি মানহানির মামলায় দুই বছরের জেলের সাজা হওয়ার পরে আইন অনুযায়ীই রাহুলের এমপি পদ খারিজ হয়ে যায়। চার বছর আগে নির্বাচনি প্রচারে কর্ণাটকে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, নিরাভ মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি, এই মোদি পদবিধারীরা সবাই কী করে চোর হয়! ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাটের বিজেপি নেতা পুর্ণেশ মোদি রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। তার দাবি রাহুল গান্ধী একথা বলে সব মোদি পদবিধারীর মর্যাদাহানি করেছেন। সেই মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাহুল দোষী সাব্যস্ত হন এবং তার দুই বছরের কারাদণ্ড হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তার এমপি পদ খারিজ হয়েছে।
এ ঘটনার পর কংগ্রেস জানিয়েছে, আইনগতভাবে সুরাটের আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হবে। একই সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইও তীব্র করা হবে। কিন্তু কংগ্রেস এখনো উচ্চ আদালতে আপিল করেননি। শনিবার বিজেপি নেতা রভি শঙ্কর প্রসাদ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশের ওপরে স্থগিতাদেশ নেওয়ার কোনো চেষ্টাই কেন করল না কংগ্রেস? তার কথায়, কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা থেকে ফায়দা নিতে চাইছে কংগ্রেস। তিনি আরো বলেন, মোদি পদবি নিয়ে রাহুল যা বলেছিলেন, সেটা সমালোচনামূলক কখনই ছিল না। ওটা অশালীন মন্তব্য ছিল। অন্যান্য পিছিয়ে থাকা শ্রেণি বা ওবিসি সমাজকে অপমান করেছেন তিনি। এ নিয়ে বিজেপি আন্দোলনে নামবে।
কংগ্রেস কেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করল না, তাহলে কি সত্যিই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা কাজ করছে, এই প্রশ্ন উঠছে বিশ্লেষকদের মনেও। রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র বিবিসিকে বলেন, বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে আদালত, তার পরে কয়েকদিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এই কয়দিনে কংগ্রেস তো উচ্চ আদালতে যেতেই পারত। কিন্তু তা তারা করেনি। নিঃসন্দেহে এর পেছনে একটা রাজনৈতিক কৌশল কাজ করছে। উচ্চ আদালতে না যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে রাহুল গান্ধীকে একজন শহিদ বা পরিস্থিতির শিকার হওয়া এক ব্যক্তির মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা তাদের পক্ষে লাভজনক তো হবেই। আবার রাহুল গান্ধীর এমপি পদ খারিজের প্রশ্নে বিজেপিবিরোধী সব দলগুলোই একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছে।
শুভাশিস মৈত্র বলেন, রাহুল গান্ধীকে নিশানা করা বিজেপির তো একটা এজেন্ডা বটেই। তবে বিজেপি-আরএসএসের মধ্যে এ নিয়ে দুটো মত আছে। একটা অংশ চাইছে রাহুল গান্ধীই থাকুন তাদের প্রধান নিশানা হয়ে। আরেকটা মত বলছে, রাহুল গান্ধী সামনে থাকলে বারবার আদানি ইস্যুটা তুলবেন, আর তাতে নরেন্দ্র মোদির ইমেজের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলো যেমন, একদিকে রাহুল গান্ধীকে ‘পরিস্থিতির শিকার’ বা তার সংসদ সদস্য পদ খারিজকে ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ’ ধরণের শব্দ বন্ধে অভিহিত করছে, অন্যদিকে বিজেপি যে কোনোভাবে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মোদির সম্পর্ককে সামনে আসতে দিতে চাইছে না। সব মিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনের এক বছর আগে এবং কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনের বছরেই ভারতের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন রাহুল গান্ধীই।