শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগ কেন উপেক্ষিত?

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৫:১৯ পিএম, ৬ মে ২০২৩ শনিবার

মন্তব্য প্রতিবেদন

   
মনোয়ারুল ইসলাম
ভার্জিনিয়ার রিজ কার্লটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা সভাটি কি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল? এ প্রশ্ন খোদ আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই উঠেছে। আয়োজন আওয়ামী লীগের, হল ভাড়া আওয়ামী লীগের, পেছনের ব্যানারে নামও আওয়ামী লীগের, অথচ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকেই দেখা গেল না। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফসল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি হাইজ্যাক হয়ে গেল আমলাদের হাতে। আওয়ামী লীগের এই সংবর্ধনা সভাটি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করলেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
গত ২ মে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এই সংবর্ধনা সভায় আওয়ামী লীগের কোন নেতা নন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। তিনি মঞ্চে ডাকলেন তারই ‘বস’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে। এর পর তিনি মঞ্চে আসন নেবার আহবান জানালেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সিনিয়র সহ সভাপতি ফজলুর রহমান (ফ্লোরিডা) ও মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজাদকে। বিনা বাক্য ব্যয়ে তারা অমন্ত্রিত অতিথির মতো একে একে আসন নিলেন। মনে হচ্ছিল নিজের ঘরেই তারা অতিথি হয়ে গেছেন। এবং মঞ্চে আসন নিয়ে ওই বসে থাকাই ছিল তাদের কাজ। রাষ্ট্রদূত তাদের একজনকেও বক্তৃতা করতে ডাকেননি। এমনকি দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকেও নয়।
অন্য ডাকসাইটে নেতারা কি অবস্থায় ছিলেন?  দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদকে দেখা গেল দর্শক সারির দ্বিতীয় সারিতে বসে আছেন। অথচ প্রটোকল অনুযায়ী তারই তো এই সভা পরিচালনা করার কথা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা নিজাম চৌধুরী, ড. প্রদীপ কর, ডা. মাসুদুল হাসান সহ অন্য সব নেতারই স্থান হয়েছিল দর্শক সারিতে। মঞ্চের পেছনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানারটি শোভা পাচ্ছিল। সেখানে জ্বলজ্বল করছিল নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নাম। সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে মঞ্চে ডেকে বসিয়ে রাখা হলেও তাকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে দেয়া হয়নি। অনুষ্ঠানে কোন সভাপতি ছিল  না।  প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সভাপতি ছাড়াই। রাজনীতিবিদদের আয়োজিত সভাটিতে রাজনীতিবিদরাই রয়ে গেলেন উপেক্ষিত। সভার নিয়ন্ত্রণ চলে গেল একজন আমলার হাতে।
একটি রাজনৈতিক দলের সভা একজন সরকারি আমলা কূটনীতিক কিভাবে পরিচালনা করেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  সরকারি চাকুরীবিধির রুলস অব বিজনেসের এটি যে একটি অসংগতি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগেই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমন এক আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রাষ্ট্রদূত কি আওয়ামী লীগ করেন? তিনি কি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন? তিনি বলেন, ১/১১ এর সময় এসব কূটনীতিক বা আমলারা কোথায় ছিলেন? নেত্রী আমেরিকায় আসার পর আমরাই ভ্যানগার্ড হিসেবে তার পাশে ছিলাম। আজ আমাদের সে রাজনীতির পরাজয় দেখলাম।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণেই শেখ হাসিনাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তার মতে, সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে তিনি সিদ্দিকুর রহমান নিরোধীদের গালে চপেটাঘাত করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, অভিযোগ ও কোন্দলের ফল কখনই মর্যাদাজনক হয় না। সূত্রটি বলেন, সিদ্দিকুর রহমান যতটুকু পেয়েছেন তার মূলে রয়েছে তার পরিশ্রম ও আনুগত্য।
জানা গেছে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি কিভাবে সাজানো হচ্ছে সে সম্পর্কে ২ মে সকালে একজন কর্মীর প্রশ্ন ছিল সিদ্দিকুর রহমানের কাছে। সিদ্দিকুর রহমান নাকি বলেছিলেন নেত্রী যেভাবে চাইবেন সেভাবেই সভাটি হবে। এর বাইরে আমার আর কিছু বলার নেই।
 আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবনের শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকেন। কাজকর্মে ছুটি নিয়ে দলের পেছনে ছুটে বেড়ান। কষ্টার্জিত ডলারের শ্রাদ্ধ তো তাদের আছেই। সেই নেতা-কর্মীদের আন্তরিক আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। হল বুকিং দিল তারা। অনুষ্ঠান সফল করতে একাধিক প্রস্তুতি সভা হলো তাদের। সংবর্ধনা সভায় বিভিন্ন স্টেট ও শহর থেকে আসলেন নেতা কর্মীরা। কিন্তু অনুষ্ঠানে তারাই শিকার হলেন নিদারুণ উপেক্ষার।