নিউইয়র্কে চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৭ এএম, ২০ মে ২০২৩ শনিবার
আজকাল রিপোর্ট
নিউইয়র্কে রিটেইলার স্টোরগুলোতে শপ লিফটিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শপ লিফটিংয়ের কবলে পড়ছে বাংলাদেশি স্টোরগুলিও। বিভিন্ন প্রিসিংকটে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রতিদিন আসছে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ। এই চোরদের দৌরত্ম্যে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। এই চুরি বেড়েছে তিন ধরনের ব্যবসায়। গ্রোসারি স্টোর, কাপড়ের দোকান ও রিটেইলার স্টোরগুলোতে। এমন কোনদিন নেই যেদিন জ্যাকসন হাইটস, এস্টোরিয়া, জামাইকা কিংবা ব্রংকসে বাংলাদেশি গ্রোসারি স্টোরগুলোতে চুরির ঘটনা ঘটছে না। বাংলাদেশি মালিকদেরও প্রতি দিনই শপ লিফটিংয়ের ঘটনার মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশি স্টোরগুলোতে চুরির ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্প্যানিশ ও কৃষ্ণাঙ্গ ছিচকে চোররা জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। দোকানে ঢুকে তিন-চারটে পণ্য হাতিয়ে নিয়ে তারা সরাসরি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। কর্মচারিরা দেখেও কিছু বলতে সাহস পায় না জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে। মালিক পক্ষ থেকেও মৌখিকভাবে কর্মচারিদের নির্দেশ দেয়া আছে, এমন ধরনের চুরির ঘটনায় প্রতিরোধ না করার। কয়েক বছর আগে এস্টারিয়ায় বাংলাদেশি একটি স্টোরে চুরিতে বাধা দিলে দুস্কৃতকারী এক কর্মচারিকে গুলি করে হত্যা করে। জামাইকায় বাংলাদেশি স্টোরে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চোরকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে ২ জন কর্মচারি হামলার শিকার হন। এর মধ্যে একজন মারা যান। ব্রংকসের আল আকসা গ্রোসারিতে এমন একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে গত ২১ এপ্রিল। একজন স্প্যানিশ চালের বস্তা নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে চলে যায়। কাউন্টারে ৩ জন মহিলা তা দেখেও না দেখার ভাব করেন। তারা নিজেরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকেন। একজন কর্মচারি জানান, ইদানিং স্প্যানিশ ও কৃষ্ণাঙ্গ চোরের পাশাপাশি কিছু বাংলাদেশি চোরেরও উপদ্রব বেড়ে গেছে। জিনিসের দাম পরিশোধ না করে তারা চলে যায়।
ফক্স নিউজের তথ্যানুসারে ২০২২ সালে শপ লিফটিং-এর হার আগের বছরের তুলনায় শতকরা ৪৪ ভাগ বেড়েছে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস বলেছেন, এ ধরনের ছিচকে চোরেরা বারবার চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। চুরিতে গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁকে গ্রেফতারের পরই তারা জেল থেকে বেরিয়ে আসে। ক্যাশবিহীন বন্ডে জামিনের কারণে তারা গ্রেফতারকেও কেয়ার করে না। বারবার অপরাধ করে। নিউইয়র্ক সিটির চিফ ক্রাইম কন্ট্রোল অফিসার বলেছেন, ২০২৩ সালের প্রথম ৩ মাসে ২৫০ জন ‘শপলিফটার’ ২ হাজার ৫০০ বার চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল।
শপ লিফটিং প্রতিরোধে সিটি মেয়র প্রশাসন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেই অনুযায়ী চুরির ঘটনা কমিয়ে আনতে এনওয়াইপিডি স্টোরের কর্মচারিদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। প্রস্তাব করা হয়েছে নেবারহুড রিটেইল ওয়াচ গ্রুপ তৈরির। তারা চোরদের তথ্যাদি একে অপরের সাথে শেয়ার করবে এবং প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশকে সরবরাহ করবে। স্টোরগুলোতে ইলেকট্রনিক ইকুয়েপমেন্ট ও টেকনোলজি সম্বলিত ‘কিয়োসক’ স্থাপন করা হবে। যা কিনা চোরদের চিহ্নিত করে সোশাল সার্ভিস কর্মসূচির সাথে সংযোগ ঘটাবে। মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে ছিঁচকে চোরদের ওপর। জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিসের অধ্যাপক রালফ সিলেন্টো অবশ্য এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, সোশাল সার্ভিস কর্মসূচি দিয়ে চুরি বন্ধ করা যাবে না। তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই চুরি কমবে।