স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্র্যান্টদের আশ্রয়স্থল
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৫১ এএম, ২০ মে ২০২৩ শনিবার
এক বছরে সিটিতে ৬৫ হাজার অভিবাসীর আগমন
আজকাল রিপোর্ট :
নিউইয়র্কের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি পুলিশ স্টেশনেও মাইগ্র্যান্টদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। বাসে করে আপ স্টেটের বিভিন্ন হোটেল ও আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে সীমান্ত পার হয়ে আসা ইমিগ্রান্টদের। স্কুল কলেজে আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অভিভাবক ও স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেক অভিভাবক সন্তানদের শিক্ষা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটি ত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন। লং আইল্যান্ডের সাফোক ও নাসাউ কাউন্টিতে কিছু সংখ্যক মাইগ্র্যান্ট পাঠানোর প্রস্তাব পাঠিয়ে মেয়র এরিক এডাম্স ইতিবাচক সাড়া পান নি। রকল্যান্ড কাউন্টি সিটি থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন ঠেকাতে আদালতের শরনাপন্ন হয়েছে। মাইগ্র্যান্ট সমস্যা মোকাবেলায় গভর্ণর ক্যাথি হোকুল ও মেয়র এরিক এডামস হিমশিম খাচ্ছেন। গত পাঁচ দিনে টেক্সাসের গভর্ণর গ্রেগ অ্যাবোট নিউইয়র্ক সিটির উদ্দ্যেশে ৬ হাজার ৫ শত মাইগ্র্যান্টকে বাসে তুলে দিয়েছেন। মেয়র এডামস গত বৃহস্পতিবার ম্যানহাটানের রুজভেল্ট হোটেলকে অস্থায়ী মাইগ্র্যান্ট আশ্রয়স্থল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের (সুনি) ক্যাম্পাসগুলোতে শরনার্থীদের আশ্রয়ের খবরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন রিপাবলিক্যান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টিফানিক। তিনি বলেছেন, গভর্ণরের ঘোষণা ‘ডিজগাস্টিং এন্ড শেমফুল’। ট্যাক্স প্রদানকারিদের সুনি স্কুল নোঙ্গরখানা খোলার জন্য নয়। আপস্টেট নিউইয়র্ক স্যানচুয়ারি সিটি নয়। এখানকার পরিবেশ নষ্ট হতে দেয়া যায় না। বাইডেনের ব্যর্থ ইমিগ্রেশন পলিসির দায় নিউইয়র্কবাসী নেবে না। আপস্টেটের ডাচেস, গ্রিনি, অরেঞ্জ ও রকল্যান্ড কাউন্টিতে ইতোমধ্যে সিটি থেকে মাইগ্র্যান্ট পাঠানোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জনগনকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
সিটি স্কুলগুলোর জিমগুলিতে মাইগ্র্যান্টদের অস্থায়ী আশ্রয়ের ঘোষণায় অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। কনি আইল্যান্ডের বেনসনহার্ষ্ট, গ্রেভসেন্ড ও সী গেট এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রুকলিনের কাউন্সিলম্যান আরি কাগান। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, অভিভাবক ও কমিউনিটি নেতাদের অনেক ফোনকল তিনি পেয়েছেন। তাদের কেউই স্কুল অঙ্গনে এভাবে ইমিগ্রান্ট পরিবারকে আশ্রয় দেওয়াকে সমর্থন দেয়নি। সিটি অবশ্য বলছে, স্কুলের ভেতরের জিমে শরনার্থী আশ্রয় নয়। যে সব স্কুলের জিম মূল ভবনের বাইরে সেখানেই শরনার্থীদের রাখা হবে।
ইমিগ্র্যান্ট বা রিফিউজিদের স্কুল জিমনেশিয়ামে আশ্রয়দানের বিষয়টি দেখভাল করছে সিটির অফিস অফ ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট। কাউন্সিলম্যান নিজেও স্কুলে ইমিগ্রান্ট বা শরণার্থীদের স্থান দেওয়ার পরিকল্পনার ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন। তিনি স্বয়ং তার টুইটার একাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ইমিগ্র্যান্টদের আবাসনের সংস্থান করার বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যা এবং কোনো জিমনেশিয়ামে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে এই সমস্যা লাঘব করা সম্ভব নয়। মেয়র এরিক এডামসের মুখপাত্র ফেবিয়ান লেভি বলেছেন, নিউইয়র্ক সিটি এক চরম মানবিক সঙ্কটের মধ্যে অবস্থান করছে। আমরা কিছু জরুরী আশ্রয়কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা স্থান খুঁজে পাচ্ছি না। আরো কিছুসংখ্যক কেন্দ্র চালু করার উদ্দেশ্যে আমরা স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছি।
গত ১১ মে বৃহস্পতিবার ‘টাইটেল ৪২’ নামে আরোপিত বিধির মেয়াদ অবসানের সঙ্গে সঙ্গে বন্যার তোড়ের মতো সীমান্ত ফটকগুলো দিয়ে ইমিগ্রান্টরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা ধেয়ে আসছে দেশের দক্ষিন অঞ্চল থেকে নর্থ ইস্টার্ন এর নিউইয়র্ক সিটির দিকে। সিটি মেয়র পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ফেডারেল সহায়তা কামনা করলেও এখন পর্যন্ত ফেডারেল সরকার তার সহায়তায় এড়িয়ে আসেনি। আগামী বছর পর্যন্ত সিটিকে ইমিগ্রান্টদের জন্য ৪.৪৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হতে পারে। যার ৩৭ শতাংশ ফেডারেল তহবিল থেকে আসা উচিত বলে মনে করেন সিটি মেয়র। কিন্তু ফেডারেল সরকারের সহায়তা দ্রুত ছাড় না দেওয়া হলে সিটির অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাবে।
মেয়র এরিক এডামসের মতে গত বছরের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে ৬৫ হাজারের বেশি ইমিগ্রান্টকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। যাদেরকে টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্ণর একতরফাভাবে নিউইয়র্কে পাঠিয়ে দিয়েছেন।