বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্নাটকে কংগ্রেস জয়ী

মোদীর বিজেপি কতটা দুশ্চিন্তায়?

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৫৫ এএম, ২০ মে ২০২৩ শনিবার


 
আজকাল ডেস্ক
ভারতের কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখল করতে দুজনেই এতটা নাছোড়বান্দা ছিলেন যে অঙ্গরাজ্যটিতে বিপুল জয়ের পরও সরকারের হাল কে ধরবেন, তা স্থির করতে পুরো পাঁচদিন ধরে হিমশিম খেল ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা সিদ্দারামাইয়া ও ডি কে শিবকুমারÑদুজনেই রাজ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয় নেতা এবং দুজনেই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। দফায় দফায় বৈঠক, গোপন আলোচনা আর নানা ফর্মুলা নিয়ে নাড়াচাড়ার পর অবশেষে কংগ্রেস গতকাল বৃহস্পতিবার জানাল, কর্নাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন প্রবীণ নেতা সিদ্দারামাইয়া। আর রাজ্যে একজনই উপমুখ্যমন্ত্রী থাকবেনÑতিনি ডি কে শিবকুমার, যিনি ডিকেএস নামেই বেশি পরিচিত। উপমুখ্যমন্ত্রী থাকার পাশাপাশি তিনি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রধান পদেও বহাল থাকবেন।
ডিকেএস নিজেই প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, এই ফর্মুলা যে তাঁর খুব একটা মন:পূত হয়েছে তা নয়। তবে ‘দলের বৃহত্তর স্বার্থে’ তিনি এই প্রস্তাব মেনে নিচ্ছেন এবং এই সিদ্ধান্তকে ‘আদালতের রায়ে’র মতো গ্রহণ করছেন।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, আসলে কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপেই ডিকেএস আপাতত এই ‘আত্মত্যাগ’ করতে নিমরাজি হয়েছেন।
এদিকে কর্নাটকের ভরাডুবি নরেন্দ্র মোদীর জন্য কতটা দুশ্চিন্তার, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে সর্বত্র। ভারতের শাসক দল বিজেপির নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্টরা একটা কথা খুব গর্বের সঙ্গে বলে থাকেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের যে প্রান্তেই প্রচারে যান না কেনÑএকার ক্ষমতায় তিনি প্রায় দশ থেকে পনেরো শতাংশ ভোট ‘সুইং’ করাতে পারেন। বিগত প্রায় এক দশকে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসাম, মহারাষ্ট্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ, নানা রাজ্যেই এ জিনিস বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে। তারা রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে সেটা দেখিয়েও থাকেন।
কিন্তু দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্নাটকে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে সেই তথাকথিত ‘মোদী ম্যাজিক’ যে একেবারেই কাজ করেনি, সেই হিসেবও কিন্তু আছে হাতের কাছেই। ভোটমুখী কর্নাটকে নরেন্দ্র মোদী বারে বারে ফিরে গিয়েছিলেন, গোটা রাজ্যে তিনি মোট কুড়িটি জনসভা আর রোড শো করেছিলেন।
একটি রাজ্য পর্যায়ের ভোটে দেশের প্রধানমন্ত্রী এতটা সময় আর শক্তি ব্যয় করছেন, যা ছিল বেশ অস্বাভাবিক। কর্নাটক দখলে রাখতে তিনি যে মরিয়া ছিলেন, বোঝা যাচ্ছিল সেটাও। অথচ এর মধ্যে রাজধানী ব্যাঙ্গালোর ছাড়া বাকি কোথাও বিজেপি দাগ কাটতে পারেনি। ব্যাঙ্গালোরের তিনটি আসন বাদ দিলে রাজ্যের যে আরও ১৭টি কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী প্রচার চালিয়েছেন, বিজেপি তার মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জিততে পেরেছে। বস্তুত, কর্নাটক নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকেই শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, ২০২৪-এ দেশের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা কতটা ব্যাহত হতে পারেÑওই রাজ্যের ফলাফল সেই প্রশ্নও কিন্তু তুলে দিয়েছে।
কর্নাটকে কংগ্রেসের বিপুল বিজয়ের মধ্যে দিয়ে গোটা দক্ষিণ ভারত থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বিজেপিÑভারতের একটা বিরাট অংশে মোদীর দলের যে আবেদন বা গ্রহণযোগ্যতা নেই, সেটাও এখন স্পষ্ট।
বোধহয় তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ হল, সফল ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যেভাবে কর্নাটকে জয় ছিনিয়ে এনেছেনÑসেটা তাঁকে মোদীর সত্যিকার চ্যালেঞ্জার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেবে বলেও অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন। কিন্তু কর্নাটক ভারতে বিরোধী দলগুলোর ঐক্য প্রশস্ত করতে পারবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির জন্য সেটা অবশ্যই আশার কথা।
দাক্ষিণাত্যের পাঁচটি বড় রাজ্যের মধ্যে (তামিলনাড়–, কেরালা, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র) বিজেপি আজ পর্যন্ত শুধু কর্নাটকেই ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। গত ১৩ই মে দক্ষিণের সেই শেষ দুর্গও তাদের হাতছাড়া হল। এখন তামিলনাড়–তে ডিএমকে, কেরালায় সিপিআইএম, তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি, অন্ধ্রে ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং কর্নাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায়Ñভারতের রাজনীতিতে যে দলগুলোর সবই বিজেপির বিরোধী।