প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করবে যুক্তরাষ্ট্র
শলা-পরামর্শ করতে আসছেন হাস
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:১০ এএম, ৩ জুন ২০২৩ শনিবার
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এই লক্ষ্যে দেশটি বাংলাদেশের ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যিনি বাধা দেবেন, তার ওপর আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন কোনও কড়া পদক্ষেপে যেতে পারে বাইডেন প্রশাসন।
ওয়াশিংটনের হঠাৎ এতটা হার্ডলাইন অবস্থা দেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে চমকে গেছেন। এর শেষ কোথায় তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কতটা পড়েছে তা জানাতে চলতি সপ্তাহে প্রায় এক মাসের জন্যে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ওই সময়ে তিনি পরিস্থিতির ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে শলা-পরামর্শ করবেন।
শেখ হাসিনা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা হয়েছে। ওই সকল সমালোচনার কোনওটারই মুখে কোনও জবাব দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এখন অনেকটা সাঁড়াশি অভিযানের মতো কঠিন চাপ সৃষ্টি করে কার্যত তার জবাব দিচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ওয়াশিংটন যাবার আগে ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ে সিরিজ বৈঠক করছেন। প্রথমে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে প্রধানত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা হয়। এই আইন নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রবণতা দেখার পর যুক্তরাষ্ট্র এই আইন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে আশ্বস্থ করা হয়েছে যে, সেপ্টেম্বর নাগাদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে। এই সংশোধন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানার লক্ষ্যে পিটার হাস আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তারপর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কেন তার নিরাপত্তা এসকর্ট সরানো হলো সে সম্পর্কে জানতে চান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তফাজ্জাল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ হার্ডলাইনের আরও কিছু কারণ এখন আলোচনায় আছে। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে বাইডেন প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার আগাম ঘোষণা দিয়েছে। অনেকে এই মতের সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন থেকে যে ফলাফল দেখতে চায়, সেটা অর্জনে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, পুরো বিষয়টাই ওয়াশিংটনের কৌশল পূরণের লক্ষ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যেন চীনের প্রতি বেশি ঝুঁকে না পড়ে সে জন্যে এই চাপ। ভারতের নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেনের প্রশাসনের আস্থার সম্পর্ক নেই। এই দু’টি দেশ কোয়ার্ডের সদস্য হলেও দিল্লি নিজেদের স্বার্থে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে। ওয়াশিংটন ও দিল্লি সম্পর্ক এখন শুধু সমুদ্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহযোগিতায় সীমিত। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশকে পুরোপুরি মার্কিন বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় বাইডেন প্রশাসন। কৌশলগত স্বার্থ হাসিলে এমন তৎপরতা বলে মনে করা যায়।
বাইডেন প্রশাসনের মনে কী আছে তা পুরোপুরি কেউ বলতে পারে না। আগামী দিনে তা আরও স্পষ্ট হবে। তবে সেই লক্ষ্য পূরণে আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞায় কাজ না হলে বাণিজ্য নিয়েও কোন অ্যাকশনে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমন আভাস বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া যাচ্ছে। আর এটি হলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ।