বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশের নির্বাচন

বাইডেন-মোদী বৈঠকেই হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ?

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:১১ এএম, ১০ জুন ২০২৩ শনিবার


 

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ঢাকা

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা তথা
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বার্থে ২০২৪
সালের নির্বাচনে হাসিনাকেই
চায় মোদী সরকার।

রাজনৈতিক ভাষ্যকার
চলতি মাসে ওয়াশিংটন আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের প্রতিবেশি বন্ধুপ্রতিম দেশটির সরকার প্রধানের এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্কের যে অবনতি তাতে বরফ গলানোর কাজ করবেন নরেন্দ্র মোদী এমনটা পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। তাহলে কী মোদীর এ সফরেই ভাগ্য নির্ধারণ হবে বাংলাদেশের?
পর্যবেক্ষক মহলের এটি মনে করার পেছনে কারণগুলো অমূলক নয়। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে আগাম ভিসা নিষধাজ্ঞা দিয়েছে। এর পরিপ্রক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রকাশ্যেই দেশের মানুষকে মার্কিন মুল্লুকে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো কিছু না কেনারও হুমকি দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে তার তুলনায় আমদানির পরিমাণ নেহায়েত সামান্য। তাহলে বিশ্ব মোড়ল দেশটির বিরুদ্ধে হাসিনার এই বিষোদগার কিসের জোরে? সচেতন মহল মাত্রই জানেন এর পেছনে রয়েছে ভারত। যদিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আগাম ভিসা নীতি ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে হাসিনা সরকার। তাই আগের চেয়ে আরও বেশি ভারতের দিকে ঝুঁকেছে দেশটি।
হাসিনা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্র কী অর্জন করতে চাইছে সেটাও এখন বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের অতিমাত্রায় সক্রিয় ভাব প্রকাশ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে দিল্লিও। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বার্থে ২০২৪ সালের নির্বাচনে হাসিনাকেই বিজয়ী দেখতে চাইছে মোদী সরকার। ভারত মনে করে, খালেদা জিয়ার শাসনামলে পাকিস্তানের প্রভাব ছিল।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নয়াদিল্লির কাছে শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প এখনও কেউ নেই। বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কঠোর হওয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং (র), জাতীয় নিরাপত্তা সমন্বয় সচিবালয়, এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দফতর পর্যন্ত ঝাঁকুনি খেয়েছে। ভারতের মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, ওয়াশিংটনের কঠোর অবস্থানের কারণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কাজকে কঠিন করে তুলেছে। দিল্লির বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাইডেন প্রশাসনের অতিমাত্রায় চাপ শেখ হাসিনার সরকারকে চীনের ওপর নির্ভরশীল করে তুলতে পারে। ঢাকায় চীনের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারে আইএসআই। এটা হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব পড়তে পারে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ-এমন খবর দিয়েছে খোদ ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। এবার ঢাকার আশা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনকে নমনীয় রাখতে আরও উদ্যোগী হবে দিল্লি। আর এটি হতে পারে নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ই হবে।
আমেরিকা আর ভারতের সম্পর্ক কতটা ভালো সেটা সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে নজর রাখলেই বোঝা যায়। এর আগে একাধিকবার নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেও এবারই রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন তিনি। আগামী ২১ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত চারদিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন নরেন্দ্র মোদী। ২২ জুন বাইডেন-মোদী বৈঠক হোয়াইট হাউসে। এই সফরে আতিথিয়তায় এমন কিছু সুবিধা পাচ্ছেন মোদী যা এর আগে কখনও হয়নি। এই সফরের আগে ভারতের স্তুতিও গাইছে আমেরিকা। ফলে মোদীর কথা ফেলতে পারবে না বাইডেন সরকার এমনটাই আশা হাসিনা সরকারের।
এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ জি-২০ এর সদস্য না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। আর এজন্য নয়াদিল্লির চাহিদা-তালিকার সবই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কিছু বাকি থাকে, তবে তা ছোটখাটো বিষয় এবং দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সূত্রের দাবি, সম্প্রতি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি ভারতকে দেওয়ার বিষয়টি দশ-পনেরো বছর আগেও কল্পনা করতে পারতেন না বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু সেটাও আজ সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে ঢাকা চাইছে, দেশটির আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা তথা পশ্চিমের যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় কূটনৈতিক ভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে থাকুক ভারত। তাই বাইডেন-মোদী বৈঠকের দিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ।