বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ৭ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার
নিউইয়র্ক জুড়ে বর্ণবাদীদের ভয়াল থাবায় সর্বত্র আতঙ্ক
আজকাল রিপোর্ট-
নিউইয়র্ক সিটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাপকহারে বর্ণবাদী হামলার শিকার হচ্ছেন। গত কয়েক মাসে কুইন্স, ম্যানহাটান, ব্রুকলিন ও ব্রংকসে প্রায় ২০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছেন। কোন কারণ বা উস্কানী ছাড়াই বাংলাদেশিদের দেখে ‘গো ব্যাক ইয়োর কান্ট্রি’ বলে চিৎকার করছে তারা। এর প্রতিবাদ করলেই হামলার কবলে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তারা গায়ে থুথু দিচ্ছে। একই সঙ্গে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ হামলার সাথে জড়িতদের অধিকাংশই কৃঞ্চাঙ্গ বা স্পেনিশ বংশোদ্ভুত।
গত মঙ্গলবার দিনে-দুপুরে জনসন্মুখে কনি আইল্যান্ডে কৃঞ্চাঙ্গ এক মহিলা সাংবাদিক মাহাথির ফারুকীর স্ত্রীর উপর হামলা করে। এতে তার কপাল ও ঠোঁট ফেটে যায়। ঘটনার আগে থেকেই কৃঞ্চাঙ্গ ঐ মহিলা মিসেস মাহাথিরকে উত্যক্ত করছিল। নিরপত্তাহীনতার কথা ভেবে তিনি এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশকে জানান। তারা কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন। কিছু সময়ের জন্য পুলিশ ঐ স্থান ত্যাগ করলে একই মহিলা আরও ২ বা ৩ জনকে নিয়ে এসে মিসেস মাহাথির স্ত্রীকে প্রচন্ডভাবে মারধর করে। তার মুখ ও ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ সময় জনাব মাহাথির গাড়ি পার্কিং এর জন্য ঘটনাস্থল থেকে দূরে ছিলেন। ফোন পেয়ে মাহথির এসে স্ত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ হামলাকারি মহিলাকে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করেছে এবং তাকে খুঁজছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মিসেস মাহাথির বাসায় ফিরেছেন।
একই দিন ম্যানহাটানে হামলার শিকার হন ব্রুকলিন নিবাসী নিয়াজ মোর্শেদ। ৪ জুলাই মংগলবার সকাল আটটায় কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে ম্যানহাটনে ৮ এভিনিউ এবং ২৩ স্ট্রিট সাবওয়ে স্টেশনে এক কৃঞ্চাঙ্গের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। এর দুই দিন আগেই বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু সাবওয়েতে দুর্বৃত্তের হামলার কবলে পড়েন। তার একটি হাত ভেঙে গেছে। তিনি বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ব্রংকসের পার্কচেষ্টার এলাকার আবুল হোসেন গত মাসে জুম্মার নামাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে হেট ক্রাইমের শিকার হন। কোন কারণ ছাড়াই এক কৃঞ্চাঙ্গ যুবক তার পাঞ্জাবি ধরে টান দেয়। প্রতিবাদ করায় তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে দেয়। এ ঘটনা দেখে স্থানীয় বাংলাদেশি লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারি দৌড়ে পালিয়ে যায়। ব্রংকসের ওয়েস্টচেষ্টার স্কয়ারস্থ এবিসি স্টোরের কাছে হিজাব পরা বাংলাদেশি এক মহিলাকে লক্ষ্য করে স্প্যানিশ এক যুবক তার গায়ে থুথু দেয়।
প্রায় প্রতিদিনই এমনই হয়রানি, হামলা ও হেট ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর ব্রকলিনের সাবওয়েতে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সভাপতি ডাঃ এনামুল হকের ভাগনীকে ট্রেনের নিচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ম্যানহাটানে সিলেট এলাকার বয়োবৃদ্ধ মাওলানা ইলিয়াছুর রহমানকে ধাক্কা দিয়ে প্লাটফর্মের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এতে তার ঘাড় ভেঙে যায়। কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ স্কুল শিক্ষিকা আলিয়া ফেরদৌসীকে উডহাভেন সাবওয়েতে সিড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল কতিপয় উগ্র স্প্যনিশ যুবক। তার মাথায় ও বুকে মারাত্মক জখম হয়। দীর্ঘ দিন তিনি মাউন্ট সাইনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অধিকাংশ বাংলাদেশিই ছোটখাট ঘটনায় পুলিশকে রিপোর্ট করেন না। নিউইয়র্ক পুলিশ প্রশাসন এ ধরনের ঘটনায় সাথে সাথে রিপোর্ট করার আহবান জানিয়েছে। তারা বলেছেন, এতে হেট ক্রাইম সংঘঠিত হয় এমন এলাকাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। প্রয়োজনে তা প্রতিরোধে পুলিশী টহল জোরদার করা যেতে পারে।