নিউইয়র্কে অভুক্ত মানুষ
খাবারের জন্য লাইন
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৯:৪৩ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার
এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলি থেকে আসা মানুষদের কাছে এ এক বিস্ময়। খাবারের জন্য লাইন। তাও ক্ষুধা নিবৃত্তির নিয়মিত কোন খাবার নয়। ফলমূল আর শাকসব্জি। আয়োজকদের ভাষায় ‘ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস’। বিনা মূল্যে এই ফ্রুটস আর ভেজিটেবলসের জন্য মানুষের এই দীর্ঘ লাইন।
এ দৃশ্য বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য দেশের সবচেয়ে ধনাঢ্য শহরের। যে শহরের চোখ ধাঁধাঁনো জৌলুস ক্রমাগত হাতছানি দিয়ে চলেছে অভাবী দুনিয়ার মানুষদের। যে হাতছানিতে মানুষ যে কোন উপায়ে এদেশে আসতে মরিয়া। আসছে বৈধ পন্থায়, আসছে অবৈধভাবে বিপদসঙ্কুল পথে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে, নদী সাঁতরিয়ে। তারপর ভাগ্যন্নোয়নে এসে ভাগ্যের সাথে চলে তাদের ছিনিমিনি খেলা। চলে দুর্ভাগ্যের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন। একই দারিদ্র্যের সাথে তাদের নতুন লড়াই।
খাদ্যের জন্য এই লাইন অভাবী দেশ থেকে আসা সেই দুর্ভাগা মানুষদের। চাল নয়, ডাল নয়, শুধু কয়েকটা আপেল-কলা বা কমলা ধরনের ফল আর কিছু শাক-সব্জি, পেঁয়াজের জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় বিপুল সংখ্যক মানুষের। এ দৃশ্য জ্যাকসন হাইটস রুজভেল্ট এভিনিউয়ের ৭৮ ও ৭৯ স্ট্রীটের মাঝের। একটি সংগঠন এক সপ্তাহ অন্তর প্রতি শুক্রবার আয়োজন করে এই ‘খাদ্য’ বিতরণের। এরই জন্য এই ভীড়। নিয়ম অনুযায়ী দুপুর বারোটা থেকে শুরু হয় বিতরণ কাজ। কিন্তু ভীড় জমে যায় সেই সকাল থেকেই। সবাইকেই ধরিয়ে দেয়া হয় সিরিয়াল নম্বরের টিকিট। টিকিট নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন খাবার প্রত্যাশীরা।
কত মানুষের সমাগম ঘটে এই উদ্যোগে? আয়োজকরা জানালেন, কমপক্ষে ২ হাজার তো বটেই। রুজভেল্ট এভিনিউ থেকে ৭৮ স্ট্রীটের ভেতরেও অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায় তাদের লাইন। এই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের মধ্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যাই বেশি। উল্লেখয়োগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি মহিলাকেও লাইনে দাঁড়ানো দেখা যায়। দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্লান্ত মানুষেরা দেয়ালের ধার ঘেঁষে বসে পড়েন বিশ্রাম নিতে। এই মানুষেরা সবাই কাছাকাছি এলাকার নন। অনেকেই আসেন বেশ দূর থেকে। সকাল সকাল আসেন, যাতে প্রথম দিকের সিরিয়াল নম্বরের টিকিট পাওয়া যায়।
খাবারের জন্য মানুষের এমন লাইন শুধু এখানেই নয়। শহর জুড়ে আরো বহু স্থানেই খাবার বিতরণের এমন ব্যবস্থা চালু আছে। জ্যাকসন হাইটসের এই রুজভেল্ট এভিনিউতে ৭৩ স্ট্রটের কোনায় সন্ধ্যায় তৈরি খাবার নিয়ে আসে একটি ভ্যান। সেখানে অপেক্ষায় থাকে গায়ে-গতরে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় প্যাকেট করা খাবার।
নগরীর অনেক চার্চে চালু আছে প্যান্ট্রি, যেখানে বিনা মূল্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এ যেন সেই বাংলাদেশের লঙ্গরখানা যেখানে দুর্যোগকালে বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়। পৃথিবীর এই ধনাঢ্য দেশের জৌলুসভরা এই শহরে এমন লঙ্গরখানা স্থায়ীভাবেই চলে আসছে।