উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ সহ ৮ দেশে
‘ধ্বংসের সবে শুরু!’
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৬:৪৯ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৩ মঙ্গলবার
উষ্ণায়নের খুব বড় প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ সহ হিন্দুকুশ হিমালয়ের তিন হাজার কিলোমিটারের সুবিশাল পার্বত্য এলাকার ৮টি দেশে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মিয়ানমারের বড় একটি অংশ। এখানে গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, আমু দরিয়া, তারিম, ইরাবতি, সালউইন, ইয়েলো ও ইয়াংঝের মতো রয়েছে ১০টি প্রধান নদী।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কায়রো, লাগোস, মাপুটো, ঢাকা, জাকার্তা, মুম্বাই, সাংঘাই, কোপেনহেগেন, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলস, নিউ ইয়র্ক, সান্তিয়াগো এইসব শহরগুলোও বিপদের মুখে। গবেষকদের ভাষায়, এই দশকেই হিমালয় পর্বতমালার একটি বড় অংশে হতে চলেছে ভয়াবহ বন্যা। যাকে ভূতত্ত্ববিদ্যার পরিভাষায় বলা হয়, গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (জিএলওএফ)।
পরিবেশবিদরা বলছেন, যেভাবে জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত মিলছে, তাতে আগামী দিনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দাপট বাড়তে পারে। গত বছর থেকে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর মিলিয়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শীতের চরিত্রেও বদল দেখা গেছে। যার পিছনে সাগরের উষ্ণায়ণকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদেরা। এসব থেকেই জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত প্রকট হচ্ছে বলেও দাবি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।
পাহাড়ে থেকে নেমে আসা কাদামাটি পানির স্রোতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে বাড়িঘর, দোকানপাট। মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। ফুঁসছে পাহাড়ি নদী। প্রবল বৃষ্টিতে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে শহরের পর শহর। নীরব দর্শক হয়ে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা দেখা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। শুধু এই উপমহাদেশ নয়, নিউ ইয়র্ক থেকে জাপান পর্যন্ত বন্যার কবলে রয়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
২০৫০ সাল ভারতের পক্ষে উষ্ণায়নের প্রেক্ষিতে একটি মাইলফলক হতে চলেছে। কারণ সমীক্ষা বলছে উষ্ণায়নের কারণে ওই বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ৫০টি দেশ সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের মধ্যে ক্ষতির অঙ্কে ভারত থাকব তৃতীয় স্থানে।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বদলাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল জলবায়ু বদল। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও বেড়েছে, মেরু প্রদেশে বরফ গলছে, কাজেই এর ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা দিচ্ছে। গত ৫০ বছরে মেরুপ্রদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গরম হাওয়া বেশিক্ষণ থমকে থাকছে পরিবেশে। আগে গরম ও শীতল হাওয়ার আদল বদল হত। গরম হাওয়া ওপরে উঠে গেলে তার জায়গা নিত শীতল হাওয়া। কিন্তু এখন, গরম হাওয়াই আটকে পড়ছে পরিবেশে। যে কারণে পরিবেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে।
বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া ঝড়ের শক্তিও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আর তার পিছনে কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত বেড়ে চলা সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাকেই দায়ী করছেন। তথ্য বলছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রিতে পৌঁছলেই ঝড়ের জন্মের শঙ্কা তৈরি হতে থাকে। আর বিধ্বংসী ঝড়গুলোর পিছনে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। যা এখন গড়ে ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান হারেই যদি কার্বন গ্যাস নির্গমন চলতে থাকে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানিস্তর তিন ফুটেরও বেশি বেড়ে যাবে। ফলে উপকূলবর্তী এলাকায়, যেখানে আগে একশো বছরে এক বার বন্যা হত, সেখানে প্রতি বছরই বন্যা হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে বহু শহর।
আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব টের পাবে ভারত। এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, জলবায়ু চরিত্র যেভাবে বদলাচ্ছে, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে পাহাড়প্রমাণ ঢেউ আছড়ে পড়বে, তৈরি হবে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়। তছনছ হবে উপকূলবর্তী এলাকা।