৮ লাখ টাকায় ওমানে গিয়ে পেলেন টয়লেট পরিষ্কারের কাজ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ৭ আগস্ট ২০২৩ সোমবার
৪ লাখ করে মোট ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ওমানে যান ময়মনসিংহের জাকিরুল ইসলাম (১৮) ও তুষার মিয়া। ভালো বেতনের প্রলোভনে তাদের দেশটিতে পাঠান মনিরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক দালাল।
অভিযোগ উঠেছে, ভবন নির্মাণকাজের শ্রমিক হিসেবে তাদের ওমানে পাঠানোর পর দেওয়া হয় টয়লেট ও রাস্তা পরিষ্কারের কাজ। সেই কাজ করতে না চাইলে চলে শারীরিক নির্যাতন। পরে মনিরুল ইসলামের ভাই ওমান প্রবাসী আবদুর রহমানের নির্যাতনে ওই কাজ করতে বাধ্য হন জাকিরুল ও তুষার।
মাস শেষে জাকিরুল ও তুষারের বেতনের টাকা জোর করে হাতিয়ে নিতেন আবদুর রহমান। বেতনের টাকা না দিলে তাদের মারধরের পাশাপাশি চলত অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত মাসে দেশে ফিরে আসেন তারা।
জানা যায়, দালাল মনিরুল ইসলাম এবং নির্যাতনের শিকার জাকিরুল ও তুষার একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের সবার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বড়ভাগ গ্রামে।
জাকিরুল ও তুষার জানান, দালাল আবদুর রহমান ও তার ভাড়াটে লোকজন ওমানে প্রতিনিয়ত তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। দুই-তিন দিনে তাদের একবেলা খাবার দিতেন। তাদের জোর করে সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে বেতনের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো। এসব অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও গোপনে দেশে পরিবারের কাছে পাঠান তারা। এরপর পরিবারের সদস্যরা টাকা পাঠিয়ে তাদের দেশে ফেরত আনেন।
নির্যাতনের শিকার দুই যুবকের মা শাহনাজ বেগম ও মোছা. নাজমা জানান, জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে মনিরুল ইসলামের মাধ্যমে মোট ৮ লাখ টাকায় দুই ছেলেকে ওমান পাঠান। সেখানে মনিরুল ইসলামের ভাই আবদুর রহমান তাদের অমানবিক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের খবর পেয়ে বাড়ি থেকে টাকা পাঠিয়ে তিন মাস পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। দালালের খপ্পরে পড়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা।
এ ঘটনায় এলাকায় সালিস হলেও হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত দেননি দালাল মনিরুল ইসলাম। এখন টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন মনিরুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম জানান, জাকিরুল ও তুষারকে বৈধভাবে ওমানে পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে কাজ ভালো না লাগায় তিন মাস পর তারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পর টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি জাকিরুল ও তুষারের বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাসেল জানান, প্রতারণা ও নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় সালিসের মাধ্যমে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনিরুল ইসলাম সিদ্ধান্ত অমান্য করে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, মনিরুল ইসলামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে দুই যুবককে ওমানে নির্যাতনের বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।