বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জেলেনস্কির মৃত্যু-পরবর্তী সরকারও ঠিক করে রেখেছে পশ্চিমারা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:৪৫ এএম, ৯ আগস্ট ২০২৩ বুধবার

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মৃত্যু এখন পশ্চিমা মিডিয়ার বেশ আলোচ্য বিষয়। চলমান এ যুদ্ধে রাশিয়ার হাতে তিনি নিহত হলে কী হবে ইউক্রেনের?

‘স্থানীয় ও প্রভাবশালী বলয়’র গোপন কিছু সূত্র ধরে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর একটি প্রতিবেদনে জেলেনস্কির পরবর্তী ইউক্রেনের সে চালচিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি হলে  দেশটির অভ্যন্তরীণ কোনো ‘জান্তা’ পরবর্তীতে ইউক্রেন শাসন করবে। ‘গভর্নিং কাউন্সিল’র অংশ হিসাবে ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন আন্দ্রি ইয়ারমাক (৫১)। বর্তমানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রধান।

সেই সরকারেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা (৪২)। অনড় থাকবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ (৫৭)।

নতুন সরকারে আবারও তিনিই সামলাবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। একই চেয়ারে থাকবেন বর্তমান সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনিও (৫০)। সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফের দায়িত্বে থাকবেন তিনিই।

দেশটির স্পিকারের ভূমিকায় থাকবে রুসলান স্টেফানচুক (৪৭)। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে বহাল থাকবে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, রাশিয়া যদি জেলেনস্কিকে হত্যা করে তবে এটি ইউক্রেনে গুরুতর আঘাত হানবে। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে না। ভেঙে পড়বে না।  

ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেক্সি ড্যানিলভ পলিটিকোর এ নিবন্ধটিতে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান।

বলেন, ‘ইউক্রেনে জেলেনস্কির মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের ধারাবাহিকতা বহাল রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি একেবারেই ভুল তথ্য, এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।’

ইউক্রেনের সমকালীন যুদ্ধাবস্থাভিত্তিক প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ইউক্রেনের সঙ্গে ঝামেলা বাড়াবেন না।  প্রাথমিকভাবে স্থিতাবস্থায় যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে যতদিন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বে থাকবেন ততক্ষণ রাশিয়ার সঙ্গে কোনো শান্তি চুক্তি হবে না।’

জেলেনস্কিকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল-রাশিয়া তাকে হত্যাচেষ্টার কারণে চিন্তিত ছিলেন কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি আমি ক্রমাগত এ বিষয়ে চিন্তা করতাম তাহলে আমি নিজেকে আড়ালে রাখতাম। অনেকটা পুতিনের মতো (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট)। যিনি তার বাঙ্কার ছেড়ে কোথাও যান না। অবশ্যই, আমার দেহরক্ষীদের চিন্তা করা উচিত কীভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে বাধা দেওয়া যায়। এটি তাদের কাজ। আমি এটা নিয়ে ভাবি না।’

জেলেনস্কি বরাবরই রুশদের থেকে ইউক্রেনের বিজয়ের কথা বললেও পরিস্থিতি মোটেও ভালো নেই ইউক্রেনের। ইতোমধ্যেই ইউক্রেন তার কিছু অঞ্চল হারিয়েছে। প্রায় ৮০ লাখ মানুষ দেশ ছেড়েছেন। সংঘর্ষে প্রায় ৩ লাখ ইউক্রেনীয় মারা গেছেন। ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

মারাত্মক ধ্বংসের মুখে অর্থনীতি। কাখোভকা হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট ধ্বংসের কারণে ডিনিপার নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে।

রিপোর্টটির একপর্যায়ে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে জেলেনস্কি তার ভয়ংকর পরিণতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না।  মৃত্যু জেলেনস্কির জন্য সর্বত্র অপেক্ষা করছে। তবে বিস্ময়ের বিষয়টি হলো-এটি রাশিয়া থেকে আসবে না।

এরই মধ্যে জানা গেছে, জেলেনস্কির ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে একটি সম্মেলনের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ইয়ারমাক। গুজব এও রয়েছে যে, তিনি সেখানে সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন যে, ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি প্রস্তুত থাকবেন।

মার্চ মাসে, সীমান্তের দুটি রুশ গ্রামে আক্রমণ করার পরে জেলেনস্কিকে হত্যা করার জন্য নতুন করে আহ্বান জানানো হয়েছিল। রুশ আইনপ্রণেতা মিখাইল ডেলিয়াগিন বলেছিলেন, এ ঘটনার একমাত্র স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো ‘জেলেনস্কির অবিলম্বে নির্মূল।’