বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জ্যাকসন হাইটসের বাঙালি আড্ডা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৪৩ এএম, ১২ আগস্ট ২০২৩ শনিবার


 
আবহাওয়াটা কি চমৎকার এখন। ঝিরিঝিরি বাতাসের ¯িœগ্ধ পরশ শরীর জুড়িয়ে দেয়। দুপুরের রোদের তীব্রতা দ্রুত কমে আসে বিকেলে। নিউইয়র্কের স্বল্পকালীন এই উপভোগ্য সময়টিকে কেউ বৃথা নষ্ট হতে দিতে চায় না। এই সময়ে ধূম পড়ে যায় বনভোজনের। এ উদ্যোগ বিশেষ করে বাংলাদেশিদের। অসংখ্য সংগঠনের অসংখ্য বনভোজন। সপ্তাহের কাজের দিনে সম্ভব হয় না। তাই ভরসা ছুটির দিন, শনি অথবা রোববার। এই মওসুমে একটি শনি-রবিও বাদ যায় না বনভোজন অনুষ্ঠানের। একটি নয়, একাধিক বনভোজনের আয়োজন হয় এই দুই দিনে। কাছাকাছি তো বটেই দূর-দূরান্তের পার্ক বা আকর্ষণীয় স্থানগুলি মুখর হয়ে ওঠে বনভোজনের আনন্দ আয়োজনে।
শুধু বনভোজনই নয়, এখন এমন আনন্দময় আবহাওয়ায় ঘর ছেড়ে বাঙালিরা বেরিয়ে পড়ছে আরো নতুন নতুন উপলক্ষ তৈরি করে। গত বছর থেকে শুরু হলেও এবার খুব বড় করে উদযাপিত হলো ‘জোছনা উৎসব’। এ আয়োজন ছিল রবীন্দ্র উৎসব ও লালন উৎসব কমিটির। এ উৎসবের ছিল একেবারেই এক ভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ভিন্ন আমেজ। আর দশটা সাধারণ উৎসবের মতো নয়, পূর্ণিমার জ্যোৎ¯œায় বিধৌত আটলান্টিক তীরবর্তী রকওয়ে সৈকতে আয়োজিত এ উৎসব সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছিল। এ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল, গান ছিল, নাচ ছিল, ঢোলের বাদ্য ছিল, সেতারের ঝংকার ছিল। ছিল হালকা জলযোগের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে মনোরম এক উৎসব-মুখরতা। খোলা আকাশের নিচে এ ধরনের অনুষ্ঠান শুধু এই মওসুমেই করা সম্ভব। তাও যদি প্রকৃতি বিরূপ না হয়, যদি বৃষ্টি-বাদল না হয়।
এই মওসুমে বাংলাদেশিদের আরো একটি প্রিয় কাজ আড্ডা দেয়া। এ আড্ডা ঘরে বসে চার দেয়ালের চৌহদ্দিতে আটকে থেকে আড্ডা নয়, মওসুমের এই আড্ডা খোলা আকাশের নিচে গ্রীষ্ম সময়ের শীতলতা উপভোগ করে উন্মুক্ত আড্ডা। এসব আড্ডার কোন নির্ধারিত বিষয়বস্তু থাকে না।  কত কথা উঠে আসে এই আড্ডার আলোচনায়, কত বিচিত্র সব প্রসঙ্গ। বাংলাদেশিদের এই আড্ডার একটি প্রধান কেন্দ্র জ্যাকসন হাইটস। এখানকার ৭৩ স্ট্রিট, যা এখন নতুন নামে পরিচিতি পেয়েছে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ হিসেবে সেখানে এই মৌসুমী আড্ডা দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। এখানকার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলিকে কেন্দ্র করেই জমজমাট হয়ে ওঠে আড্ডা। রেস্টুরেন্টের ভেতরে চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়িয়ে যেমন, তেমনি রেস্টুরেন্টগুলির সামনে খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়েও নানা কথায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করে দেন আড্ডাপ্রিয় মানুষেরা। সারা দিনের কাজের পরে এখানে এসে এক কাপ চা হাতে সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন গল্পগুজবে।
এই আড্ডাই এখন সম্প্রসারিত হয়ে গেছে ডাইভার্সিটি প্লাজায়। একদা ৭৪ রোড নামে পরিচিত রাস্তাটির ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিটের মধ্যবর্তী নাতিদীর্ঘ পরিসরকে সংস্কার করে পরিণত করা হয়েছে একটি খোলা অঙ্গনে। এ অঙ্গনে সভা-জমায়েত হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, রাজনৈতিক জমায়েত হয়, যার যেমন কর্মসূচি এখানে এসে তারা সেটাই উদযাপন করেন। তবে এ অঙ্গনটি বেশি ব্যবহার হচ্ছে আড্ডার কাজে। চেয়ার সাজিয়ে বসে আড্ডায় মেতে উঠছেন নানান দেশি মানুষ। তবে প্রাধান্য বেশি বাংলাদেশি আর নেপালীদের। ডাইভার্সিটি প্লাজা নামে পরিচিত এই অঙ্গনের দুধারে বেশিরভাগ দোকানই বাংলাদেশিদের। এখানকার একটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশি শিল্পীর আঁকা বাংলাদেশের প্রকৃতি।
বাংলাদেশ স্ট্রিটের মতো এই ডাইভার্সিটি প্লাজাতেও এখন বাংলাদেশিদের তুমুল আড্ডা। তাদের নানান জটলা প্লাজা জুড়ে। তাদের আড্ডার বিষয়বস্তুও ভিন্ন, বৈত্র্যিময়। গত বুধবারেই এখানে দেখা গেল কত বিচিত্র আড্ডার দৃশ্য। এক দিকে জটলা করে দাঁড়িয়ে কথায় মশগুল নিউইয়র্কের সাহিত্য-সাংবাদিকতা জগতের সবিশেষ পরিচিত ব্যক্তিবৃন্দ। আড্ডাটি মূলত জমে উঠেছে ঢাকা থেকে আসা প্রকাশক-শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবীর ঢালী এবং রেদোয়ানুর রহমান জুয়েলকে কেন্দ্র করে। সঙ্গে আছেন আদিত্য শাহীন, সৈয়দ আজিজুর রহমান তারিফ, ফারুক আহমদ। তাদের আড্ডার মধ্যেই এসে যোগ দিলেন মনজুর আহমদ, আহমাদ মাযহার, আমানউদ্দৌলা, হাসানাল আবদুল্লাহ। একটু দূরেই এক পাশে চেয়ার পেতে গা এলিয়ে বসে মুক্তিযোদ্ধা এবং কমিউনিটির পরিচিত মুখ মশিউর রহমান সহ আরো বেশ কয়েকজন। তাদের এই আড্ডা নাকি প্রাত্যহিক। এই মওসুমে প্রতিদিনই বিকেলে তারা এখানে চেয়ার পেতে বসে সময় পার করেন নানা কথায়।
এই দৃশ্যই এখন জ্যাকসন হাইটসের এপ্রান্তে-ওপ্রান্তে। এভাবেই এখন জমজমাট হয়ে রয়েছে জ্যাকসন হাইটসের বাঙালি আড্ডা। এ আড্ডা মওসুমি। শীতের দেশের এই স্বল্পকালীন আনন্দময় মওসুম শেষে এ আড্ডারও ঘটে যাবে সাময়িক সমাপ্তি।