বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এমটিএফই’র প্রতারণার জাল পশ্চিমবঙ্গেও

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৩ রোববার

‘মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ’ (এমটিএফই) নামের অনলাইন ট্রেডিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জাল ছড়িয়েছে ভারতেও। এই অ্যাপের মাধ্যমে রুপি বিনিয়োগ করে দ্রুত আয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একাধিক মানুষ।

রবিবার রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সদর শহর বারাসাতের আরিফবাড়ী এলাকায় এই সংস্থায় বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ দেখালে গোটা ঘটনাটি সামনে আসে।
বিনিয়োগকারীদের দাবি, এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিনিয়োগ করা অর্থের উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ রুপি জমা হতো। এক কথায় দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়েই এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু হঠাৎ করেই অ্যাকাউন্ট থেকে তারা আর রুপি উঠাতে পারছিলেন না। ফলে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে কয়েক লাখ রুপি বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন কার্যত সর্বশান্ত।

ইতিমধ্যেই এই অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে বাংলাদেশে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন পেশার বহু মানুষ। গণমাধ্যমের সেই খবর দেখে পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগকারীরা এক প্রকার নিশ্চিত, তারাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কারণ বারবার বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি।

জানা গেছে, শুধু বারাসাত এলাকায় প্রায় দেড় হাজার বিনিয়োগকারী থেকে প্রায় পঞ্চাশ কোটি রুপির বেশি তছরূপ করেছে সংস্থার দুই সিইও প্রণয় দে ও জহিরুল ইসলাম। বারাসাত এলাকাতেই একাধিক হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে এমটিএফই গ্রুপের। পাশাপাশি কলকাতার নিউটাউনে আবাসন খাতেও বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে এই সংস্থার।

রবিবার ব্যারাকপুর-বারাসাত রোডের আরিফবাড়ী এলাকায় ‌‘স্যাফ্রন ইন’ নামে একটি গেস্ট হাউজের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। জানা গেছে, এই হোটেলের মালিক এমটিএফই নামক ওই সংস্থার সিও প্রণয় দে। প্রতারিত মানুষদের অনুমান সংস্থার দুই সিইও-সহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রণয় দে’র দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিও জানাতে থাকেন তারা।

জানা যাচ্ছে, এমটিএফই কেবল বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বিহার, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও আসামসহ বহু রাজ্যেও এর বিস্তার ঘটেছিল। প্রতারণার জাল ফেলেছিল সংস্থাটি।

সহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, আমার হাত ধরে অন্তত দেড়শ থেকে ২০০ মানুষ এই অ্যাপে রুপি জমা রেখেছিলেন। ভ্যান, রিকশাচালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-বিভিন্ন পেশার মানুষ এই অ্যাপের মাধ্যমে তাদের অর্থ গচ্ছিত রেখেছে। অনেকে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে লোন তুলে এই অ্যাপে জমা রেখেছে। কিন্তু অর্থ ফেরত না পাওয়ার কারণে অনেকেই আত্মহত্যার দিকে এগোচ্ছেন। আমরা চাই প্রণয় দে’কে আইনের আওতায় এনে বা তার সাথে আলোচনা করে রুপি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

অন্যদের দেখাদেখি এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় আড়াই লাখ রুপি বিনিয়োগ করেছিলেন ‘স্যাফ্রন ইন’ গেস্ট হাউজের ম্যানেজার পুরন্দর নামে এক যুবক। এদিন তিনি জানান, অন্যরা যেই সমস্যায় ভুগছেন আমিও একই পথের পথিক। অন্য বিনিয়োগকারীদের দেখে আমিও প্রায় দু থেকে আড়াই লাখ রুপি বিনিয়োগ করি।

তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে ওই গেস্ট হাউজের মালিক প্রণয় দের সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। ফোন করছি, সেটি রিসিভ করছে না। কোনো মেসেজও পাঠাচ্ছে না। এই অ্যাপের মাধ্যমে যারা রুপি বিনিয়োগ করেছেন, তারা এখন সকলে আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করছেন। কিন্তু আমারও কিছু করার নেই। আসলে আমি নিজেও জানি না মালিক কোথায় আছেন।