মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুইন্সবোরো ড্যান্স ফেস্টিভাল

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১৭ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার


 
সুনাগরিক
‘মেল্টিং পট’ নামে পরিচিত নিউইয়র্ক নানান জাতির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি কসমোপলিটান নগরী। এমন কোন দেশ সম্ভবত আর নেই যে দেশের মানুষ এই নগরীতে এসে আশ্রয় নেয়নি। ইমিগ্র্যান্টদের দেশ আমেরিকা, আর এই দেশে ইমিগ্র্যান্টদের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্ক। যুগের হিসেবে নয়, বলা যায় শত শত বছর ধরে এখানে আগমন ঘটছে অভিবাসীদের। শিক্ষা বিভাগের হিসাবে নগরীর স্কুলগুলিতে ১৮০টি ভাষাভাষি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে। তবে সার্বিক হিসাবে অন্তত ২০০টি ভাষার মানুষের বসবাস এই মহানগরীতে।
যারা পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই এখানে এসেছে তারা সঙ্গে করে শুধু তাদের ভাষাকে তো এনেছেই, একই সঙ্গে এনেছে তাদেও নিজেদের সংস্কৃতিকেও। শত সংস্কৃতির সম্মিলনীতে নিউইয়র্ক হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধ। কারো প্রতি কোন বৈষম্য নয়, কোন বিদ্বেষ পোষণ নয়, পরষ্পরকে ভালবেসে, পারষ্পরিক শ্রদ্ধায় এ শহরে একে অপরকে কাছে টেনে নিয়েছে। সবার সংস্কৃতিই এখানে স্বমর্যদায় প্রতিষ্ঠিত, সব সংস্কৃতির প্রতি সবার স্বীকৃতি এই মহানগরীকে মহিমান্বিত করেছে। সব সংস্কৃতির এই ‘এক দেহে লীন’ হওয়ার কারণেই এ নগরীর পরিচিতি ‘মেল্টিং পট’ হিসেবে।
লীন হয়ে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরঞ্চ সকল বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে সুরক্ষায়, সেগুলিকে আরো সমৃদ্ধ ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ নগরীতে আযোজিত হয় নানা উৎসব। নানা স্থানে অনুষ্ঠিত হয় নানা অনুষ্ঠান, সরকারি উদ্যোগে এবং বেসরকারি উদ্যোগে। এমনই একটি উদ্যোগ কুইন্স বোরো ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল সংক্ষেপে ‘কিউডিএফ’। প্রতি গ্রীষ্মে তারা আয়োজন করে উন্মুক্ত অঙ্গনে নৃত্য উৎসবের। এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশের নৃত্য শিল্পীরা। তবে নিজ নিজ দেশের নামে নয়, সবাই নিউইয়র্কবাসী হিসেবে এ উৎসবে আসেন এখানে গড়ে তোলা তাদের সংগঠনের ব্যানারে।
এ বছরও চলছে তাদের এই উৎসব। না, তেমন ঘটাপটা বা আনুষ্ঠানিকতা নয়, কোন মঞ্চ বা বাদ্য-বাদকের আড়ম্বর নয়, অত্যন্ত অনাড়ম্বর সাধারণভাবে রাস্তাঘাটেই খোলা আকাশের নিচে তারা আয়োজন করছে তাদের এই নৃত্য উৎসব। উল্লেখ করা দরকার, এই উৎসব নতুন কিছু নয়, ২০১৪ সাল থেকে গত দশ বছর ধরেই এটি আয়োজিত হচ্ছে এভাবে। এ বছর এ উৎসব শুরু হয়েছে জুন মাসের ৩ তারিখে। চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সারা বোরো জুড়ে বিভিন্ন স্থানের খোলা অঙ্গনে আয়োজিত হয়েছে তাদের নৃত্যানুষ্ঠানের। এ বছরের কর্মসূচি অনুযায়ী তারা ৩০টি অনুষ্ঠান করবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২১টি। অংশ নেয়ার কথা ২৫টি সংগঠনের। এবারের উৎসব শেষ হওয়ার পথে। উৎসবের তিনদিনব্যাপী সমাপ্তি আসর বসবে ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর। তবে এই সমাপ্তি আসর আর খোলা অঙ্গনে নয়, তিন দিনের এই অনুষ্ঠান হবে কুইন্স থিয়েটারে। এখানে ঢুকতে প্রবেশ মূল্য লাগবে ২৭ ডলার এবং ডিসকাউন্ট মূল্যে ২০ ডলার।  
২ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটস ডাইভার্সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত হলো কুইন্সবোরো ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের ২০ তম আসর। এতে অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন ভাষাভাষিদের নয়টি সংগঠন। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশি সংগঠন নীলা ড্যান্স একাডেমী। অন্যরা ছিল ট্যাপলাইফ কোম্পানী, আইয়াযামানা ড্যান্স গ্রুপ, জিভা ড্যান্স, কিনডিং সিনডো, রবার্ট মার্ক ড্যান্স, উমামি প্লেগ্রাউন্ড ড্যান্স কোম্পানী এবং টেন টেকোমাই। প্লাজায় সমবেত বিপুল সংখ্যক মানুষ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। কোন আনুষ্ঠানিকতা নয়, দর্শকদের বসার কোন ব্যবস্থাও নয়, সবাই গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে সেপ্টেম্বরের এই পড়ন্ত বিকেলে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির এই সব নাচ উপভোগ করেন। সত্যিকার অর্থে তারা উপভোগই করেছেন। এক এক গ্রুপের নাচ শেষে তারা বিপুল করতালিতে অভিনন্দিত করেছেন শিল্পীদের।     
নীলা ড্যান্স একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী নীলা জেরিন পরিবেশন করেন কত্থক। তবে এখানেই শেষ নয়, অনুষ্ঠান শেষে তিনি ফেস্টিভ্যালের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কারেসিয়া বাতানের আমন্ত্রণে আবার গিয়ে দাঁড়ান অঙ্গনে, আগ্রহীদেল আহ্বান জানান তার সাথে নাচে অংশ নেয়ার জন্য। অন্য দেশের শিল্পীরাও তার ডাকে এসে দাঁড়ান তার পেছনে, তাকে অনুসরণ করে কত্থকের তালে তাল মেলান। লক্ষ্যণীয় ছিল এতে একজন প্রবীণের অংশ গ্রহণ।  নীলা জেরিন উৎসবের সমাপ্তিতে আবারও কত্থক পরিবেশন করবেন ১৬ সেপ্টেম্বর।
কুইন্সবোরো ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কারেসিয়া বাতান নিজেও একজন নৃত্যশিল্পী। সানিসাইডের বাসিন্দা বাতানের স্বপ্ন কুইন্সের নৃত্যশিল্পীদর মধ্যে একটি সহজ যোগসূত্র গড়ে তোলা এবং ড্যান্স কমিউনিটি হিসেবে তাদেরকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। এই উৎসবের উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যাকসন হাইটস এলাকার কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান। তিনি বলেছেন, কুইন্স বোরোতে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি। যেগুলি হয়ে রয়েছে অবহেলার শিকার। সেগুলিকে তুলে এনে প্রতিষ্ঠা দেয়ার ক্ষেত্রে এই উৎসব বিশেষ অবদান রাখছে।