যেকোনও মুহূর্তে ‘আগাম পদক্ষেপ’ নিতে পারে প্রতিরোধ ফ্রন্ট: ইরান
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৫:১২ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৩ মঙ্গলবার
টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘাতে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।
ইরান এতোদিন এই সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা বললেও যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটি এবারই প্রথম সবচেয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি বলছে, চলমান এই যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি যেকোনও মুহূর্তে আগাম পদক্ষেপ নিতে পারে প্রতিরোধ ফ্রন্ট।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরান বারবার ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা বলেছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার যে মন্তব্যটি করেছেন তা দেশটির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সতর্কতা হিসেবে সামনে এসেছে।
তিনি বলেছেন, চলমান যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান আরও বলেছেন, ‘যদি গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ বন্ধ না হয়, তাহলে ‘প্রতিরোধ ফ্রন্ট’ আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগাম পদক্ষেপ নিতে পারে।’
ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও কাতার সফর শেষে তেহরানে ফিরে সোমবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আঞ্চলিক সফরে আমি এসব দেশের সরকার ও প্রতিরোধ ফ্রন্টগুলোর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তারা রাজনৈতিক উপায়ে চলমান সংকটের সমাধান চান। কিন্তু তা যদি সম্ভব না হয় এবং গাজাবাসীর ওপর যদি ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকে তাহলে যেকোনও মুহূর্তে যেকোনও কিছু ঘটে যাওয়া সম্ভব।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘লেবাননের হিজবুল্লাহসহ সবগুলো প্রতিরোধ গ্রুপ তাদের সূক্ষ্ম বিবেচনায় সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিরোধ নেতারা ইসরায়েলকে যা খুশি তাই করার অনুমতি দেবেন না। তারা যেকোনও সময় আগাম কিছু করে বসতে পারেন।’
হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আজ যদি আমরা গাজা উপত্যকাকে রক্ষা না করি তাহলে আমাদেরকে একদিন নিজেদের শহরগুলো রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে হবে।’
ইরানি এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাসান নাসরুল্লাহ তাকে বলেছেন, ‘আজ যদি হিজবুল্লাহ আগাম ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আগামীকাল তাকে বৈরুতে ইসরায়েলি সেনাদের মোকাবিলা করতে হবে।’
বিবিসি বলছে, রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা প্রতিরোধ ফ্রন্ট হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে বিদ্যমান বাহিনীগুলোর একটি জোট যার মধ্যে ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী লেবানিজ সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহও রয়েছে।
অবশ্য গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে গুলি বিনিময় করেছে। আর এতে এই আশঙ্কাই সামনে এসেছে যে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আরেকটি ফ্রন্টে শুরু হতে পারে।
বিবিসি বলছে, লেবাননেন সশস্ত্র গ্রুপ হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। এমনকি এই বাহিনীর হাতে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি হাজার হাজার সু-প্রশিক্ষিত ও পারদর্শী যোদ্ধা রয়েছে।
হিজবুল্লাহ ছাড়াও ‘প্রতিরোধ ফ্রন্ট’-এ সিরিয়ার এমন অনেক বাহিনী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যাদেরকে ইরান সমর্থন করে। আর সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত রয়েছে। এছাড়া তেহরান সমর্থিত ইরাকের অনেক গ্রুপও ‘প্রতিরোধ ফ্রন্ট’-এর অন্তর্ভুক্ত।
পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য তেহরানকে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি আরও বাড়ানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে এবং এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের আশপাশে আন্তঃসীমান্ত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবও হয়েছে।
কিন্তু কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল যদি গাজায় স্থল আক্রমণ শুরু করে এবং ‘প্রতিরোধ ফ্রন্ট’-এর যোদ্ধারা সেটির জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।
এর আগে সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ঘটবে।
তিনি বলেন, ইরান নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে এই পরিস্থিতি দেখতে পারে না। লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ঘণ্টায় একটি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে বলেও সাক্ষাৎকারে জানান তিনি।