শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আমি এবং আজকাল

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৪৩ এএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার


 
মনজুর আহমদ -
সেই ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে ‘আজকাল’-এ ঢুকেছিলাম। বড় আনন্দ হয়েছিল। যে একটি মাত্র পেশায় বিরতিহীনভাবে পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিলাম সেই পেশায় নতুন করে ঢুকতে পারা নিশ্চয় আনন্দের ব্যাপার। নতুন করে মানে চাকরি নিয়ে পত্রিকা অফিসে আবার থিতু হওয়া। এর আগে নিউইয়র্কে আমি দুটি পত্রিকায় কাজ করেছি, কিন্তু কোথাও স্থায়ী হতে পারিনি। সে পত্রিকা দুটির একটিও এখন নেই। আজকাল-এ পা রেখে আমি একটা স্থায়ীত্বের অনুভূতিতে আপ্লুত হয়েছিলাম। সেই থেকে আজ অব্দি এই পত্রিকাতেই রয়েছি।
পেশাগত সাংবাদিকতায় আজ আমার টানা তেষট্টি বছর চলছে। কবে সেই ১৯৬১’তে শুরু করেছিলাম। তেষট্টি বছর মানে পুরো একটা জীবন। আর কোন পেশায় যাইনি। পুরো জীবনভরই এই এক পেশায়, সাংবাদিকতায়। এ পেশা আমার কাছে অতি পবিত্র, আদর্শ, নীতিনিষ্ঠ একটি পেশা। এ পেশার রয়েছে এক ভিন্ন মর্যাদা। যে নীতিবোধে, যে আদর্শে সামান্যতম স্খলন এই পেশার মর্যাদাকে কলংকিত করে। আজকের দিনে এই পেশা নিয়ে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এ পেশা আজ নীতিবোধহীন, আদর্শচ্যুত। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশা দলীয় আনুগত্যে বিভাজনের কবলে পতিত হয়েছে।
এ অবস্থা আমাদের সময়ে আমরা দেখিনি। আমাদের সময়ের সাংবাদিকতা ছিল পক্ষপাতহীন, আদর্শভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ। সেই চিন্তা-চেতনা নিয়েই নিউইয়র্কে নিজেকে জড়িত করেছি আমার একান্ত প্রিয় এই চিরায়ত পেশায়। এ প্রসঙ্গে দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই সাংবাদিকতার আদর্শ ও নীতিবোধকে সমুন্নত রেখেই এখানে পালন করে চলেছি এই মহান দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে ‘আজকাল’ আমাকে দিয়েছে অবাধ সুযোগ ও স্বাধীনতা। ‘আজকাল’ এমন একটি পত্রিকা যেখানে সমবেত হয়েছেন এক ঝাঁক পেশাদার সাংবাদিক, আমারই মতো যারা সবাই সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ঢাকার সংবাদপত্রে। এই উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন হাসানুজ্জামান সাকী, রয়েছেন মনোয়ারুল ইসলাম। আরো রয়েছেন সনজীবন সরকার। এতজন খ্যাতিমান সাংবাদিকের সমাবেশ এই প্রবাসে একমাত্র ‘আজকাল’ পত্রিকাতেই রয়েছে।
আজকাল’কে শুধু একটি পত্রিকা মাত্র নয়, আমরা এটিকে একটি পরিপূর্ণ সংবাদপত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছি। সকল গুরুত্বপূর্ণ খবর এবং বিশেষ করে সর্বশেষ খবরটি পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে আমরা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছি। আমাদের এই প্রয়াসেরই ফল সাম্প্রতিক সময়ে পর পর কয়েকটি সংখ্যায় ক্রমাগত সাড়া জাগানো এক্সক্লুসিভ খবর পরিবেশন। আজকাল এক বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে রঙিন পাতায় সাহিত্য, বিনোদন, খেলার পাতা প্রকাশ করে। প্রতিটি পাতাকেই বিষয় বৈচিত্র্যে ভরিয়ে তুলতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। আজকাল-এর সাহিত্য পাতাকে আমরা প্রবাসী লেখক-লেখিকাদের লেখায় সমৃদ্ধ করে তুলেছি। প্রবাসে বাংলা সাহিত্য চর্চা এখন যথেষ্ট বেগবান। এখানকার এই কবি-লেখকদেরকেই আমরা তুলে আনছি সাহিত্য পাতায়। তেমনি কলামের জন্য নির্দিষ্ট পুরো ছয়টি পাতাকে আমরা ভরিয়ে তোলার চেষ্টা করছি স্থানীয় লেখকদের লেখা দিয়ে। স্থানীয় লেখক-কলামিস্টদের উৎসাহিত করা তাদেরকে অনুপ্রাণিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
সম্প্রতি আজকাল-এর মালিকানায় পরিবর্তন ঘটেছে। পত্রিকাটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির সুপরিচিত মুখ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব শাহ্ নেওয়াজ। নতুন ব্যবস্থাপনায় পত্রিকায় নতুন অনুপ্রেরণার সঞ্চার হয়েছে, কাজের পরিসর বিস্তৃত হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদনার সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকে আমি এখন প্রত্যয়ের সাথে এ কথা বলার সুযোগ নিতে চাই যে, ‘আজকাল’ পাঠকদের প্রত্যাশা পূরণে সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। কোন ব্যত্যয়কে এ ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, আজকাল, নিউইয়র্ক।