বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানে মার্কিন ডেল্টা ফোর্স!

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:২৬ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত ৭০০০ ছাড়াল

আজকাল ডেস্ক -
অবরুদ্ধ গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে ৩ হাজারের মতো শিশুই রয়েছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে, আকাশপথে হামলার পর গাজায় এবার স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। ট্যাংক নিয়ে রাতভর এ অভিযান চালানো হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধরত ফিলিস্তিনের হামাস বাহিনীর টানেল ধ্বংসে নামছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিট ‘ডেল্টা ফোর্স’।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ কিছু তথ্যে জানা গেছে, গাজার প্রায় ৪৫ শতাংশ ভবন পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে। জাতিসংঘ পরিচালিত ২৯টিসহ ২১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার ১৪ লাখের মতো মানুষ অভ্যন্তরঢু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১০১ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত ও আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি অকেজো হয়ে গেছে। উত্তর গাজার ২৪টি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালগুলোকে ক্ষমতার ১৫০ গুণ বেশি চাপ নিতে হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে ইনকিউবেটরে রাখা ১৩০টি নবজাতক মারাত্মক ঝুঁকিতে। গাজায় প্রতিদিন আনুমানিক ১৬৬টি শিশু অনিরাপদভাবে জন্ম নিচ্ছে।
অধিকৃত ১৭ বছর বয়সী এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আহত হয়েছে ১৪ বছর বয়সী আরেক শিশু। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। উত্তর রামাল্লাহর জালাজোন শরণার্থী ক্যাম্পে অভিযান চালানোর সময় ইউসেদ হামদি হেইদাহ নামক ওই শিশুকে মাথা ও বুকে গুলি করে ইসরাইলী বাহিনী।
১৪ বছর বয়সী আরেক শিশুকেও অভিযানের সময় গুলি করা হয় বলে জানিয়েছে মেডিকেল সূত্র। আহত শিশু দুটিকে রামাল্লাহর হাসপাতালে নেয়া হলে হেদেইদাহকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
হেদেইদাহর মৃত্যু নিয়ে মোট ১০৪ জন ফিলিস্তিনিকে অধিকৃত পশ্চিমতীরে গত ৭ অক্টোবর থেকে হত্যা করলো ইসরাইলী বাহিনী।
গাজায় ইসরাইলী হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যাকে হতভম্ব হওয়ার মতো ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, শিশুদের এ হতাহতের ঘটনা ‘আমাদের বিবেকের ওপর কালিমা লেপন’। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক আদেলে খোদর বলেন, ‘গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আমাদের সম্মিলিত বিবেকের ওপর ক্রমবর্ধমান দাগ ফেলছে। খাবার, পানি, মেডিকেল সরঞ্জামাদি, জ্বালানিসহ মানবিক সহায়তা সেখানে ঢুকতে না দেয়ায় প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে।
এদিকে, হামাসের টানেল ধ্বংসে এবার নামবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিট ‘ডেল্টা ফোর্স’। ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় আকস্মিক আক্রমণের অংশ হিসাবে ইউএস ডেল্টা ফোর্স কমান্ডোদের তত্ত্বাবধানে নার্ভ গ্যাস এবং রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে হামাসের টানেল প্লাবিত করবে। বৃহস্পতিবার একটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ফরাসি দৈনিক লা মন্ডে।
ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র হামাসের টানেল ভেদ করতে, ২২৪ জিম্মি উদ্ধার ও হাজার হাজার হামাস সেনাকে হত্যা করতে ডেল্টা ফোর্স নামাবে বলে জানা গেছে। সূত্রটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁস হওয়া একটি ভিডিও থেকে এ তথ্য এসেছে। সূত্রটি আরও বলেছে, ‘হামাসের টানেলে প্রচুর পরিমাণে নার্ভ গ্যাস পাম্প করা হবে, যা ৬ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে শারীরিক চলাফেরা পঙ্গু করে দিতে সক্ষম। এই সময়ের মধ্যে, ইসরাইলী সেনারা টানেলগুলোতে অনুপ্রবেশ করবে। জিম্মিদের উদ্ধার করবে এবং হাজার হাজার আল-কাসেম সেনাকে হত্যা করবে বলে আশা করছে।’ ধারণা করা হচ্ছে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি ‘যুদ্ধ বিভাগ’র সভা এবং পরিকল্পনা অধিবেশনে অংশ নিতে ইসরায়েল সফর করেন।
একটি পোস্টে বাইডেন ভুলভাবে একটি ছবি শেয়ার করেন। যাতে দেখানো হয়েছে, তিনজন ডেল্টা ফোর্স কমান্ডার ইসরাইলী সেনাকে জিম্মি মুক্তি করার অপারেশনের পরামর্শ দিচ্ছেন। পরে তা মুছে ফেলা হয়।
এদিকে, ইসরাইলের মিত্ররা আশঙ্কা করছে, এ পদক্ষেপ গাজার ফাঁদে পা দেওয়ার মতো হতে পারে। তারা ধারণা করছে হামাস এবং তেহরানে তার সমর্থকরা অবশ্যই ইসরায়েলের অনুপ্রবেশের পরে একটি ভয়ংকর আক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার পরিকল্পনা করছে। হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিজবুল্লাহর বোমা তৈরির দক্ষতা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। হামাসের এখন বিমান বিধ্বংসী ক্ষমতা রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান রোববার বলেছেন, এই অঞ্চলে অবিরাম গণহত্যা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ইসরাইলী সেনাদের জন্য গুরুতর ও তিক্ত পরিণতি বয়ে আনতে পারে।