গাজায় ব্যাপক ইসরায়েলি হামলা, সব যোগাযোগ বন্ধ
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:১১ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার
ইসরায়েল ইন্টারনেট এবং ফোন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অন্ধকারে ডুবে গেছে গাজা। তাই গাজা থেকে খবরও খুব কম আসছে। ফিলিস্তিনিরা জানতে পারছেন না তাদের প্রিয়জন, বন্ধু বা পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কি না।
ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর এই অঞ্চলের বাসিন্দারা বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গাজার অভ্যন্তরে বেসামরিক লোকদের সাহায্যকারী চিকিৎসা সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, শুক্রবার ভূখণ্ডের সব ইন্টারনেট এবং ফোন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগের অভাবে এই মুহূর্তে ঠিক কী ঘটছে তার খবর পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন। আমরা নিশ্চিতভাবে যা জানি তা হলো, গাজা মানবিক সংকটে ভুগছে।
ফিলিস্তিনি, সাহায্যকারী গোষ্ঠী, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের সংস্থাগুলো বলেছে, তারা গাজায় কর্মীদের এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা এবং ইন্টারনেট নিরীক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা ‘নেটব্লক’ স্থানীয় সময় শুক্রবার গাজা উপত্যকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর দিয়েছে। বোমা হামলার ফলে ইন্টারনেট, সেলুলার এবং ল্যান্ডলাইন পরিষেবাগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অঞ্চলটিতে ব্যাপক বোমাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও বলেছে, তাদের বিমান এবং স্থলবাহিনী গাজায় আক্রমণ তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার (এমএসএফ) নামে পরিচিত দাতব্য সংস্থা বলেছে, তারা কিছু ফিলিস্তিনি সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা একটি বার্তায় গ্রুপটি বলেছে, ‘আল শিফা হাসপাতাল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া রোগী, চিকিৎসাকর্মী এবং হাজার হাজার পরিবারের জন্য আমরা গভীরভাবে চিন্তিত। আমরা গাজা উপত্যকাজুড়ে সব চিকিৎসক, কর্মী এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানাই।’
এর আগে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, হামাস হাসপাতালটিকে ভূগর্ভস্থ টানেল এবং কমান্ড সেন্টারের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বেশির ভাগ স্থানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এবং জেনারেটরের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই অন্ধকার নেমে এসেছে। গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষ বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্রমাগত বিমান হামলার বিস্ফোরণে গাজা শহরের আকাশ প্রতি ঘণ্টায় আলোকিত হচ্ছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ, যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা এবং স্থল আক্রমণের বিবরণ বিশ্ববাসী জানতে পারবে না।
আলজাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজউম ঘটনাস্থলে আছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা বর্তমানে নেটওয়ার্কগুলোতে কোনো অ্যাক্সেস পাচ্ছেন না, তাঁরা বিচ্ছিন্ন।’ গাজার বাইরের ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। কবি এবং লেখক মোহাম্মদ এল-কুর্দ (এক্স)-এ বলেছেন, ‘গাজায় আমার পরিচিত কেউই আমার লেখার উত্তর দিচ্ছে না।’ কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘বিশ্ব সংঘাতের বাস্তব চিত্র দেখার একটি জানালা হারাচ্ছে।’ তারা সতর্ক করে বলেছে, ‘তথ্যের শূন্যতা, বিভ্রান্তি এবং ভুল তথ্য দিয়ে পরিপূর্ণ হতে পারে বিশ্ব।’
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গাজায় চিকিৎসাব্যবস্থা আরো ধাক্কা খাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস বলেছেন, ‘ফোন লাইন এবং ইন্টারনেট ছাড়া হাসপাতাল ও সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটবে। যুদ্ধের অনেক নিয়ম আছে। বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সব ল্যান্ডলাইন, সেলুলার এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে তাদের অপারেশন রুমের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’ আরো বলেছে, ‘আমরা জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে জরুরি নম্বর ১০১ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর। ফলে আহতদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেছেন, ‘আমরা গাজায় আমাদের কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী এবং বাকি সবার সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি। ফলে নিরাপত্তা এবং রোগীদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’