বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জোরদার হামলায় আরো ৩৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৮:৫৩ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৩ রোববার

অবরুদ্ধ গাজায় সামরিক অভিযান আরো জোরদার করেছে ইসরাইল। হামলার ২৩তম দিনে শনিবার রাতে সেখানে আরো সেনা পাঠানোর দাবি করেছে সামরিক মুখপাত্র। এর ফলে সেখানে ২৪ ঘণ্টার অভিযানে আরো ৩৫৫ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও বলেছেন এ অভিযান বেশ কঠিন এবং দীর্ঘায়িত হবে। এ অবস্থায় ইরানের প্রেসিডেন্ট গাজা অভিযান নিয়ে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন এ পরিস্থিতি সবাইকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে পারে। আর গাজা ও ইসরাইলের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এদিকে শুক্রবারের অভিযানে গাজায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একে ভেঙ্গে পরার পর তার আবার আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। খবর আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, আনাদোলু, এএফপির। 

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি রোববার বলেছেন, গত রাতে গাজা উপত্যাকায় আমাদের সেনা সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত আমাদের যোদ্ধাদের সঙ্গে তারা অভিযানে যোগ দিয়েছেন। আমরা সেখানে ধীরে ধীরে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্থল অভিযানও সম্প্রসারণ করছি। তিনি বলেন, স্থল অভিযান আসলে বেশ জটিল এবং এতে আমাদের সেনাসদস্যদের জন্যও ঝুকি রয়েছে। সেনাসদস্যদের নিরাপত্তা এবং এ যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা জল, স্থল, আকাশ সীমায় আমাদের ক্ষমতার মধ্যে সবই করবো। গত রাতে সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর  ৪৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে হ্যাগারি বলেন, উত্তরে হিজবুল্লাহ আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমাদের বিরুদ্ধে যারাই লড়াই করছে, তাদেরকেই আমরা হত্যা করছি। এদিকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের স্থল অভিযান দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শনিবার টেলিভিশনে এক ভাষণে তিনি একে দীর্ঘমেয়াদী ও কঠিন যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেন। এই যুদ্ধকে ইহুদিদের টিকিয়ে রাখতে তিন হাজার বছরের পুরোনো যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জিতব। আমরা জয়ী হবো। হামাসকে পরাজিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। হামাসকে পরাস্ত করতে ইসরাইলের অতিরিক্ত বাহিনী এখন গাজা উপত্যকার সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে বলেও তিনি জানান। 
ইসরাইলের এ হামলায় ফিলিস্তিনে ৩৫৫জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে এ নিয়ে ৩৩২৪টি শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৮০০৫ জনে দাঁড়িয়েছে। 

এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল স্থল হামলা চালানোর মাধ্যমে ‘চূড়ান্ত সীমা’ অতিক্রম করেছে এবং এতে প্রত্যেককে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রাইসি লিখেছেন, ইহুদিবাদী গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞ চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে; যা সবাইকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে পারে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে তেহরানকে না জড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। অন্যদিকে, এই যুদ্ধকে আঞ্চলিক রূপ দিতে ইসরাইলকে অব্যাহত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। শনিবার রাতে আলজাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে রাইসি একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ঢুকেছিল এবং তারা ‘পরাজিত’ হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসরাইলি সেনারা গাজা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

গাজার অভ্যন্তরে একাধিক স্থানে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে লড়াই করছে বলে দাবি করেছে হামাস। হামাসের সামরিক শাখা ইজেদিন আল-কাসেম ব্রিগেডের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়েছে, ‘গাজা ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিমে ইসরাইলি সেনা ও তাদের সামরিক পরিবহনে হামলা করা হয়েছে।’ কাসেম ব্রিগেড থেকে জানানো হয়েছে, ‘গাজা শহরের পূর্বে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।’ এছাড়া টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে হামাস-ইসরাইল সংঘাতের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।

ইসরাইলের টানা হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপক বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ভয়াবহ রক্তপাত অবসানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু সফররত জাতিসংঘ প্রধান বলেন, গাজার পরিস্থিতি প্রতি ঘণ্টায় পরিবর্তন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে প্রয়োজনীয় মানবিক যুদ্ধবিরতির বদলে ইসরাইল সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। তিনি বলেন, সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চোখের সামনে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে আর সারাবিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করছে।

এদিকে অব্যাহত বিমান হামলায় প্রায় দেড় দিন অন্ধকারে ডুবে থাকার পর গাজায় ফিরতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ। সংবাদ সংস্থা সাফা এবং হামাস সংশ্লিষ্ট শেহাব নিউজ এজেন্সি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া, রিয়াল-টাইম নেটওয়ার্ক ডেটাও গাজা ভূখণ্ডে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরছে বলে জানিয়েছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ ‘নেটব্লকস’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে গাজায় ইন্টারনেট ফেরার খবর জানিয়েছে। এক্সের এক পোস্টে ফিলিস্তিন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি থেকে বলা হয়, টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা ধীরে ধীরে ফিরছে।

বন্ধ হয়ে গেছে গাজার ৩০ হাসপাতাল: ইসরাইলের হামলায় গাজার অন্তত ৩০টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে মেডিকেল সামগ্রীও শেষ হয়ে গেছে। সে কারণে বেশিরভাগ হাসপাতালই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দাবি করের্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী তাদেরকে আল কুদস হাসপাতাল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতালের ৫০ মিটারের মধ্যে বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে দাবি করে এক এক্স পোস্টে রেডক্রিসেন্ট বলেছে দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে আমরা অনতিবিলম্বে আল কুদস হাসপাতাল খালি করে দেওয়ার হুমকি পেয়েছি। 

বন্দী বিনিময়ে প্রস্তুত হামাস: গাজার হামাস শাখার প্রধান ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ার বলেছেন, তারা ইসরাইলের সঙ্গে বন্দী বিনিময় করতে প্রস্তুত। শনিবার তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা ইসরাইলের সঙ্গে অবিলম্বে বন্দী বিনিময় চুক্তি করতে প্রস্তুত।’ আল-সিনওয়ার বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি হলে সমস্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।’ তবে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বন্দী বিনিময়ের প্রস্তাব হামাসের ‘মনস্তাত্ত্বিক উগ্রবাদ।’

গুদামে ঢুকে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা: অব্যাহত বোমা হামলায় বিপর্যস্ত লিফিস্তিনিরা। হামলার কারণে গাজায় খাদ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের খাদ্যের গুদামে হামলা চালিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা সেখান থেকে আটা-ময়দার মতো অতি প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে গাজায় কাজ করা জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। সংস্থাটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, মানুষ হতাশ হয়ে বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন। আর এসব হতাশা ও যুদ্ধের কারণে গাজায় যে কোনো সময় আইনের শাসনে ধস নামতে পারে।