মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণ

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৪৩ পিএম, ১ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য।

এই পৃথিবীকে প্রাণীকুলের জন্য বসবাসযোগ্য করেছে বৃক্ষ। বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত। তাই বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। পৃথিবী থেকে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে এবং অক্সিজেন দিয়ে এই বৃক্ষই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ঘোষণা করেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি গাছের চারা লাগায় অথবা বীজ রোপন করে, অতপর সেই গাছ ও ফসল দ্বারা কোনো মানুষ উপকৃত হয় কিংবা পশুপাখি ভক্ষণ করে, এর বিনিময়ে তার আমলনামায় সদকার সওয়াব লিখিত হয়।’

 

মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ সৃষ্টি করে ভূপৃষ্ঠের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলবান বৃক্ষরাজি ও সবুজ শ্যামল বনভূমির মাধ্যমে সুশোভিত সৌন্দর্য্যমন্ডিত করেছেন। বৃক্ষরোপণকে ইবাদতের সমতুল্য ঘোষণা করে ইসলাম যে শান্তির ধর্ম তা বাস্তবে রূপায়নের চমৎকার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত আছে একটি হাদিস, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে বললেন, আমার ভাই চাষ করে আর আমি জিকির করি ও খাই। মহানবী (সা.) বললেন ‘তোমার চেয়ে তোমার ভাই বেশি আবেদ।’ এই নশ্বর পৃথিবীতে মুমিনের একমাত্র লক্ষ্যই হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। বেশি বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। গাছ লাগানো আমাদের প্রিয়নবী (সা.) এর অতি পছন্দনীয়ে একটি কাজ ছিল।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনে উদ্ভিদ সম্পর্কে এরশাদ করেন, ‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সকল প্রকার উদ্ভিদ উদগত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ক শস্যরাজি উদগত করি।’

এই আয়াতের মাধ্যমে পৃথিবীবাসী বৃক্ষরাজি যে কত বড় নিয়ামত তার প্রমাণ পায়। আবহমান কাল ধরে বৃক্ষরাজি মানুষের জীবন-জীবিকার উপাদান জুগিয়ে আসছে। একটি গাছ থেকে মানুষ, পশুপাখি, অন্যান্য প্রাণী ছাড়াও বিশ্ব পরিবেশ বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার পক্ষে বৃক্ষের দান অপরিসীম।

 

সমগ্র বিশ্বে পরিবেশ রক্ষায় ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এর সম্মুখভাগে রয়েছে বনায়ন। পৃথিবীটাকে সবুজ রাখতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইসলাম এ ব্যাপার বিজ্ঞানসম্মত ও সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রাণী জগতের বসবাস অনুকূলে পৃথিবী গড়ার উৎকৃষ্ট ভূমিকা পালন করছে। শুধু বৃক্ষরোপণ নয় বরং তা রক্ষাণাবেক্ষন বিষয়ে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি একটি ফলবান বৃক্ষরোপণ করে উহার সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ কর, তাহলে তোমাদের দ্বারা বেহেশতে একটি ফলবান বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সমতুল্য হবে।’

গাছ মুসলমানদের সদকায়ে জারিয়ার অন্যতম উপকরণ। মুসলমানেরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে মৃত্যুই জীবনের চূড়ান্ত সমাপ্ত নয়, মৃত্যুর পরও অনন্ত একটা সময়ের সম্মুখীন হতে হয়। ইসলামে বৃক্ষরোপণ ও ফসল ফলানোকে সদকায়ে জারিয়া বা অবিরত দান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করে তাহলে ওই গাছটি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন ওই ব্যক্তির আমল নামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে।

প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করে তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায় শুধু তিনটি ব্যতীত। আর তা হচ্ছে- (১) যদি সে কোনো সদকায়ে জারিয়া রেখে যায়, (২) এমন জ্ঞান রেখে যায় যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়, (৩) নেক সন্তান যে তার জন্য মাগফিরাত কামনা করে। এই তিনটি ভালো কাজের ফল সে পেতে থাকবে।’

 

গাছপালা খাদ্য তৈরীর সময় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ হতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। আর সমগ্র মানবকুল বায়ুমন্ডল হতে অক্সিজেন গ্রহণ করে। গাছ যদি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ত্যাগ না করতো তবে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যেত এবং প্রাণীকুল ধ্বংস হয়ে যেত। এছাড়াও গাছ মানুষের জন্য খাদ্য, ওষুধ সরবরাহ ও আসবাবপত্র তৈরি মূল্যবান উপকরণের জোগান তো দিয়েই থাকে। সুতরাং বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, যা কেউই অস্বীকার করতে পারেন না।

জীবজন্তু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে বৃক্ষের কোনো বিকল্প নেই তাই বৃক্ষরোপনণের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করে রাহমাতাল্লিল আলামিন ইরশাদ করেছেন, যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তেও তোমাদের কারোর হাতে একটি চারা গাছ থাকে তাহলে সে যেন সেই বিপদ সংকেট মুহূর্তেও তার রোপণ করে দেয়।

সবুজ শ্যামল বিশ্বের মানচিত্র রক্ষার জন্য আজ আমাদের সামনে একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে আর তা হলো অধিক বৃক্ষরোপণ। বৃক্ষহীনতায় যেকোনো দেশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়। ফলে মানব জীবনে নানা সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃক্ষের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বলেছেন, ‘আমরা যেমন স্নান করি এবং শুভ্র বস্ত্র পরিধান করি, তেমনি বাড়ির চারপাশে যত্ন পূর্বক একটি বাগান করে রাখা ভদ্র প্রথার একটি অবশ্য কর্তব্য অঙ্গ হওয়া উচিত।’

বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করতে হলে সরকারের সঙ্গে জনসাধারণকেও এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই মহতী কাজে অংশীদার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। সুতরাং বলা যায়, আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে সবুজের সমারোহ করতে সর্বস্তরের নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে ভূপৃষ্ঠে বৃক্ষের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষরাজি আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারণ, গৃহস্থালি, আসবাবপত্র, ওষুধ, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক শোভাবর্ধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভূত উপকার সাধন করে। এছাড়া বৃক্ষ ভূমি ক্ষয়রোধ, পরিবেশ সংরক্ষণ, মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই ইসলামে বৃক্ষরোপনের প্রতি এত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

আমাদের সকলকে ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ এই স্লোগান বাস্তবায়ন করে বৃক্ষরোপণকে একটি সামাজিক আন্দোলন রূপে প্রতিষ্ঠা করে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বৃক্ষরোপণের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার তৌফিক দান করুন।