বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে সুধীজনদের মুক্ত আলোচনা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:০৬ এএম, ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
আজকাল রিপোর্ট
রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস ‘পিপল আপ’ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মুক্ত আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অবিলম্বে প্যালেস্টাইন ভূখন্ডে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে মত প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে নিউইয়র্কে গড়ে তোলা সংস্থা পিপল আপ-এর উদ্যোগে গত সোমবার সন্ধ্যায় জ্যামাইকা ১৪৭-১৪ হিলসাইড-এ বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের শাখা অফিসে ড. আবু জাফর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আজকাল এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমদ, পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, লেখক অনুবাদক ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, সাংবাদিক মঈনউদ্দিন নাসের, টাইম টিভি ইউএসএ’র সত্ত্বাধিকারী ও বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক আবু তাহের, নিউইয়র্ক কাগজ এর সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম ও রাজনৈতিক সংগঠক মুশফিকুর রহমান মোহন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে আবু জাফর মাহমুদ পিপল আপ এর পক্ষ থেকে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশি আমেরিকান ও তৃণমূল রাজনীতির ভেতর দিয়ে উঠে আসা মানুষ হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে সমাজের গুণীজন ও নেতৃত্বদানকারীদের সঙ্গে মতামত বিনিময়ের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
বিশিষ্ট সাংবাদিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান আলোচনায় বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ যখন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে প্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখন কিছু কিছু বিষয় আমাদেরকে প্রতিবন্ধকতার মুখে ঠেলে দেয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি। এটি আমাদের জন্য এখন আর প্রগতির ব্যাপার নয়। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা।
টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার সিইও আবু তাহের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে, রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যাপারে মতামত দেয়ার। এক্ষেত্রে আমরা যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মতামত রাখতে পারি। কিন্তু প্রয়োজন মানবতা, ধর্মীয় ও জাতীয়তার প্রতি দায়বদ্ধতা রক্ষা করা।
মনজুর আহমদ মানুষের উন্নাসিকতা বা উদাসিনতা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখানে বসে আলোচনা করে বা লিখে তার কোনো ফলাফল আশা করতে পারি না। কারণ, আমাদের কাজগুলো আন্তরিতার সঙ্গে দেখবার মানসিকতাই এখন নেই। ফিলিস্তিনী ও ইসরায়েল প্রশ্নে মনজুর আহমদ বলেন, গাজাবাসীর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের আর পিছু হটবার জায়গা নেই। প্যালেস্টাইনীরা যদি তাদের মুক্তির জন্য লড়াই করে আমরা তার বিরোধিতা করতে পারি না। এই আমেরিকাতেই ফিলিস্তিনীদের পক্ষে আন্দোলন বিক্ষোভ হচ্ছে। আমি মনে করি মানবতা ও অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষের কর্তব্য।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, সারা পৃথিবীর জন্যই সময়টি অত্যন্ত সংকটময়। সকল সংকটের যদি শান্তিপূর্ণ সমাধান না হয়, তাহলে গোটা পৃথিবী এক ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে পারবে না।
লেখক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু বলেন, জন্মের পর থেকে শুনছি দুটি জনপদের কথা। একটি হচ্ছে কাশ্মির অন্যটি প্যালেস্টাইন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও দেখছি অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে এই দুটি জনপদের মানুষ। আজ ফিলিস্তিনী ইসরায়েল পরিস্থিতি নিরসন করতে পারে শুধু একজন। তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের বলেন, বাংলাদেশে যা চলছে আমি এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করতে পারি না। দেশে গণতন্ত্রকে ধংস করে ফ্যাসিবাদ কায়েমের যে প্রক্রিয়া চলছে। তা কায়েম হয়ে যাবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনোই পথ দেখি না।
সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলাম প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিষাক্ত পরিবেশের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এমন একটি মুক্ত আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য পিপল আপ’কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে মানুষ নানাভাবেই শংকিত ও উৎকণ্ঠিত। এমন পরিস্থিতিতে খোলামেলা মত বিনিময় করে আমরা আমাদের মানসিক শক্তি ও বিবেচনাকে শাণিত করতে পারি।
সমাপনী বক্তৃতায় ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বর্তমান সময়ের যে রাজনীতি ও বিবেচনা তা সাধারণ মানুষের উপলব্ধির ক্ষেত্রে বেশ কঠিন ও প্যাচালো। বিশ্বের এক নম্বর শক্তি আমেরিকায় বসবাসকারী হিসেবে আমরা ফিলিস্তিনী-ইসরায়েল ইস্যুটিকে কীভাবে দেখবো। এর একটি সরল দিক রয়েছে। তা হলো, আমরা মুসলিম। ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে আমরা প্রথমত মানবিক, দ্বিতীয়ত মুসলিম সন্তানের ওপর আঘাত ও নির্যাতন আমাদেরকে স্পর্শ করে। এই পৃথিবীতে সব সন্তানেরই স্বাধীন দেশে বসবাসের অধিকার রয়েছে। তা সে ইসরায়েলেরই হোক বা ফিলিস্তিনের হোক। এই আমেরিকান গণতান্ত্রিক নীতির মধ্যেই প্রত্যেকের স্বাধীন সাার্বভৌম জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে এবং আমরা আমেরিকান অনেক নেতৃত্বের মধ্যেই সেই অধিকার বাস্তবায়নের তাগিদও লক্ষ্য করি। আমরা চাই না, কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক, কোথাও যুদ্ধ পরিস্থিতি বলবৎ থাক, যুদ্ধের নামে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চলুক। আমরা চাই বিশ্ব নেতৃত্ব আমেরিকার হস্তক্ষেপেই অতীতের মতো এবারও এই মুহূর্তে যুদ্ধ বিরতি হোক। মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসুক।