গ্রেপ্তার এড়াতে চট্টগ্রামে কৌশলী বিএনপি
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১৯ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২৩ সোমবার
বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তালাবদ্ধ। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি হরতাল-অবরোধ ডাকার পরও কার্যালয় খোলেনি। কোনো নেতাকে সেখানে দেখা যায়নি। অবশ্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, আন্দোলনের গ্রেপ্তার এড়াতে নেতারা প্রকাশ্যে আসছেন না।
এদিকে আওয়ামী লীগ রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করছে। কর্মসূচির পরিসরও তারা বাড়াচ্ছে।
গতকাল রবিবার দুপুর ২টায় মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। ভবন ও ভবনের আশপাশে সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচির বিভিন্ন স্লোগান ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতার ছবিসংবলিত ব্যানার ঝুলছে।
এ সময় সেখানে একজন কর্মীও দেখা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, ওই কার্যালয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ককেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কেও নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। প্রবেশপথের ডান পাশে বিএনপি কার্যালয় থেকে কয়েক শ গজ দূরে বসে ১৮-২০ জন পুলিশকে দেখা যায়।
বাঁ পাশে ফুটপাতে মোহাম্মদ আলম নামের এক পান-সিগারেটের দোকানদার। দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিনি বলেন, ‘আমি আজকে (গতকাল) সকাল ১০টা থেকে এখানে আছি। এই পর্যন্ত কাউকে দেখিনি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এক দিন সারা দেশে (গত ২৯ অক্টোবর) হরতাল ছিল। ওই দিন থেকে তাদের কাউকে এখানে দেখিনি।
এর আগে প্রচুর নেতাকর্মী আসত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনার পর মহাসচিবসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আড়ালে চলে যান। পরদিন ২৯ অক্টোবর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশির পাশাপাশি এরই মধ্যে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
দ্বিতীয় দফায় বিএনপির টানা দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি গতকাল শুরু হয়েছে। এদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতালও ছিল।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিন চট্টগ্রাম নগরে দেড় শতাধিক গ্রেপ্তার হলেও তাঁদের প্রায়ই থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের কর্মী। মোট গ্রেপ্তারকৃতের মধ্যে নগর কমিটির একজন সদস্য রয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। দলটির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে বিএনপি নেতারা গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। এ জন্য প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্ব পালনকারী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে কোনো কর্মসূচি ছিল না। তাই কেউ যায়নি। আজ (গতকাল) চট্টগ্রামে হরতাল ও কেন্দ্র ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাস্তায় নামলেই গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর পরও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করছি। সামনে আরো কঠিন কর্মসূচি আসছে। সবাই যাতে গ্রেপ্তার না হয় তার জন্য আমাদের নেতারা নির্দেশনা দিচ্ছেন। উনারাও যেকোনো সময় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারেন।’
রাজপথে থাকছে আওয়ামী লীগ
সরকারবিরোধী কর্মসূচির বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন দল চট্টগ্রামে মিছিল, সভা ও সমাবেশ আরো বিস্তৃৃত করবে। গত সপ্তাহে বিএনপির এক দিনের হরতাল ও তিন দিন অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা নগরে যেসব স্থানে কর্মসূচি পালন করেছে, গতকাল থেকে কর্মসূচির পরিসর আরো বাড়ানো হয়। গত সপ্তাহে নগরের কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের মধ্যম পর্যায়ের নেতারা মিছিল সমাবেশ করলে সেখানে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের রাজপথ দূরে থাক, তাদের দলীয় কার্যালয়েও যায়নি। হরতাল ও অবরোধকালে নগরে কয়েকটি গাড়িতে আগুন-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচির নামে তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে আবার জ্বালাও পোড়াওয়ে নেমেছে। বিএনপি-জামায়াতকে চট্টগ্রামে আর মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরসহ জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং জনগণের জানমাল রক্ষার্থে আমরা রাজপথে থাকব। আমাদের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাঠে আছে।’