মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্রোহীদের তুমুল আক্রমণের মুখোমুখি মিয়ানমার জান্তা

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৫:৫৩ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

মিয়ানমারের সামরিক সরকার স্বীকার করেছে, তারা জান্তাবিরোধী বাহিনীর ভারি আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। বিদ্রোহীরা গত অক্টোবর মাসের শেষে সম্মিলিত আক্রমণ শুরু করেছিল। তারা দাবি করেছে, সীমান্ত এলাকার বেশ কয়েকটি শহর এবং বেশ কয়েকটি সামরিক পোস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

সামরিক সরকারের একজন মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, উত্তরে শান রাজ্য, পূর্বে কায়াহ রাজ্য এবং পশ্চিমে রাখাইন রাজ্যে সেনারা সশস্ত্র বিদ্রোহী সেনাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পড়েছে।

 অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধারা সামরিক পোস্টে বোমা ফেলার জন্য শত শত ড্রোন ব্যবহার করেছে। ফলে কিছু জায়গা খালি করতে হয়েছে বলে জাও মিন তুন বলেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা কার্যকরভাবে ড্রোন হামলা থেকে বাঁচতে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার জান্তা সরকার বেসামরিক নেতা অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। এর পরেই মিয়ানমার বিভিন্ন সংকটে নিমজ্জিত হয়।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু সামরিক বাহিনী তাদের ওপর বলপ্রয়োগের চেষ্টা করলে কিছু বেসামরিক মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এবং জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগ দেয়। এই জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করে আসছে।

মিয়ানমারের ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস’ অনুসারে, এই সহিংসতায় অন্তত চার হাজার ৪৮৫ জন বেসামরিক এবং অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মী নিহত হয়েছে।

মিয়ানমারের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) একটি গ্রুপ ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর অধীনে ২৭ অক্টোবর চীনের সীমান্তের কাছে শান রাজ্যে নতুন করে আক্রমণ শুরু করে। তাদের লক্ষ্য হলো ‘অত্যাচারী সামরিক একনায়কত্ব’ নির্মূল করা। যুদ্ধটি পশ্চিম রাখাইন ও চিন রাজ্যসহ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধের ফলে দুই লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং শিশুসহ অন্তত ৭৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছে, ‘সংঘাতের বিস্তারের কারণে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুদ্ধের কারণে দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়েছে।’

এদিকে বুধবার মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানায়, অন্তত ১০ সেনা ও ২৮ জন পুলিশ সদস্য তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। মঙ্গলবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনে সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধ শেষে সরকারবিরোধী সশস্ত্র এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন। এদিকে থাই সীমান্তে কায়াহ রাজ্যে অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধারা রাজ্যের রাজধানী লোইকাওয়ের কাছে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন।

সামরিক মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘শহরের কারাগার এবং পুলিশ অফিসকে টার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে কায়াহতে আহত সেনাদের আত্মসমর্পণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করতে দেখা যায়।  ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের ভাইস কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক বিদ্রোহীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এখনই আপনাকে গুলি করতে পারি; কিন্তু আমরা তা করব না। আপনি সাদা পতাকা তুলুন এবং বেরিয়ে যান, আপনার কিছুই হবে না।’ আত্মসমর্পণকারী এক মিয়ানমার সেনাকে এ কথা বলছিলেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।