বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্কের হাসপাতালে বাংলাদেশি শিল্পী জিসানের বিশাল ম্যুরাল

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৫৯ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স হাসপাতালে বিশালকায় একটি ম্যুরাল এঁকেছেন বাংলাদেশি আমেরিকান তরুণ শিল্পী জিহান ওয়াজেদ। এনওয়াইসি হেলথ এন্ড হসপিটাল বিভাগের তথ্য মতে আমেরিকার পাবলিক হাসপাতালের কমিউনিটি ম্যুরাল প্রকল্পের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ম্যুরাল।

গত ১৫ নভেম্বর কুইন্স হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী নেইল জে মুর ও জিহান ওয়াজেদ যৌথভাবে ফিতা কেটে উন্মোচন করেন ১২’শ ৫০ বর্গফুটের ‘রুটস অফ মেডিসিন’ শিরোনামের ম্যুরালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কুইন্স হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. এরিক ওয়েই, এসিসস্ট্যান্ট ভাইস চেয়ারম্যান রিক লুফটগ্লাস, কুইন্স হসপিটাল কমিউনিটি বোর্ড চেয়ারম্যান রবিন হোগানস, কুইন্স মেডিকেল নির্বাহী কমিটির পরিচালক ডা. মার্সি স্টেইন এলবার্ট ও শিল্পী জিহান ওয়াজেদ।

জ্যামাইকার কুইন্স হসপিটালের মূল প্রবেশপথের ডানে প্রথম ও দ্বিতীয় তলা মিলে প্রশস্ত লবির দেয়ালে বিশালাকৃতির ম্যুরালটি হাসপাতালের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। নিউইয়র্ক সিটির হেলথ অ্যান্ড হাসপাতাল বিভাগের ‘কমিউনিটি ম্যুরাল প্রজেক্ট-এর আওতায় জিহানের এ ম্যুরালে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে লোরি এম. টিশ ইল্যুসিনেশন ফান্ড।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে ‘রুটস অফ মেডিসিন’ বা ‘ওষুধের মূল’ হলো আটটি ফুল ক্যালেন্ডুলা, ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমাইল, ইচিনেসিয়া, তিসি (ফ্ল্যাক্স সিড), গোলাপের পাপড়ি, সেন্ট জনস ওয়ার্ট এবং কলমি ফুল (ন্যাস্টার্টিয়াম)। এগুলোর মধ্যে ল্যাভেন্ডার অস্থিরতায় প্রশান্তি ও অবসাদ আনতে; ক্যামোমাইল হজমে সহায়তা করতে; ক্যালেন্ডুলা প্রদাহ ও ক্ষত-নিরাময়ে; ইচিনেসিয়া রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে; তিসি বীজ হৃদপি-কে ঠিক রাখতে ও হজমে সহায়তা করতে; গোলাপের পাপড়ি প্রশান্তি আনতে; সেন্ট জনস ওয়ার্ট বিষন্নতা দূর করতে ও উদ্বেগ প্রশমনে এবং সর্বোপরি কলমি ফুল বা ন্যাস্টার্টিয়াম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক। শিল্পী জিহানের ‘রুটস অফ মেডিসিন’ ম্যুরালে তাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

জিহান বলেন, কৈশোরে আমার একটি আঙুল ভেঙে গেলে আমার বাবা আমাকে এই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এনেছিলেন। আমার আঙুল সেরে ওঠে। সেই আঙুল দিয়েই আমি আজকের এই ম্যুরাল এঁকেছি।

সিটি হেলথ এন্ড হসপিটালস এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ এরিক ওয়ে, এমডি বলেন, আমাদের রোগী, তাদের পরিবার এবং আমাদের কর্মীদের নিরাময় সংস্কৃতিতে উৎসাহিত করার কৌশল হিসেবে আমরা শিল্পকর্মগুলোকে করিডোর, ক্লিনিক ও স্টাফদের বিচরণের জায়গায় স্থাপন করি, যা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সিটির হাসপাতালগুলোতে চলতি বছর যে নয়টি নতুন ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে, কুইন্স হাসপাতালে জিহানের ‘রুটস অফ মেডিসিন’ তার অন্যতম।

লারিসা ট্রিন্ডার বলেন, জিহানের ম্যুরালটি হাসপাতালের ব্যস্ত লবির মধ্যে প্রকৃতিকে নিয়ে এসেছে বাস্তবে। ম্যুরালে জীববৈচিত্রকে তুলে ধরা হয়েছে যা মানুষের রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে এবং প্রশান্তি আনে রোগীর মনে। আমরা জনস্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাবের জন্য ম্যুরালগুলিকে স্বাস্থ্যসেবার একটি পরিষেবা হিসাবে বিবেচনা করি।

দীর্ঘদিন ধরে স্টুডিওতে ছবি আঁকার পাশাপাশি নিজস্ব স্টাইলে দেয়ালে ম্যুরাল আঁকছেন শিল্পী জিহান ওয়াজেদ। নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ার ই্স্ট রিভার তীরে হল্টারস পয়েন্ট মেগা ডেভেলপমেন্টে ‘এ সিটি ইন মোশন’ নামে একটি ম্যুরাল এঁকেছেন জিহান। ৭৫০ ফুটের এই ম্যুরালটির স্থিরচিত্র সচল হয়ে উঠে মোবাইল অ্যাপসে। এ ছাড়া জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৪ এ জিহান ওয়াজেদের গড়া একটি ম্যুরাল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। তার গড়া অন্যতম শিল্পকর্মের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন, নিউইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিলি জিন কিং ন্যাশনাল টেনিস সেন্টার, এস্টোরিয়ায় ১৭৭ ফিট দীর্ঘ ম্যুরাল ‘ওয়েলকাম এস্টোরিয়া’ মুর‌্যাল এবং জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ‘বাংলাদেশ ম্যুরাল’ অন্যতম। ম্যানহাটানস্থ গ্যালারিতে তার বেশ কয়েকটি একক চিত্র প্রদর্শনী ব্যাপক সাড়া জাগায় মুলধারার দর্শকের মাঝে।

উল্লেখ্য, সিটির হেলথ এন্ড হসপিটালস নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বৃহৎ শিল্প সংগ্রাহক হিসেবেও সমাদৃত, যাদের সংগ্রহে ৭,০০০ এর অধিক শিল্পকর্ম রয়েছে এবং কোনো কোনো ঐতিহাসিক ম্যুরালের জন্য খ্যাতনামা শিল্পীদের কমিশন করা হয়েছে। এ প্রকল্প শুরু হয়েছিল ১৯৩০ এর দশকে ওয়ার্কস প্রগ্রেস প্রশাসনের আওতায় এবং এ প্রকল্পের অধীনে হাসপাতালগুলোতে স্থাপিত হয়েছে শিল্পকর্ম, মোজাইক, আলোকচিত্র, স্থাপত্য, ম্যুরাল। এসব কর্মে অবদান রেখেছেন আমেরিকার বহু নেতৃস্থানীয় শিল্পী, যাদের অন্যতম জ্যাকব লরেন্স, বোমারে বিয়ারডন, হেলেন ফ্রাঙ্কেনথালের, ম্যারি ফ্র্যাঙ্ক, বেটি ব্লেটন, ক্যানিডা আলভারেজ প্রমুখ। শিল্পকর্ম সংগ্রহের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই কাজগুলো এক নিরাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে, দৃষ্টিসুখের সৃষ্টি করে।