৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে সৌদিতে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১১:১০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার
সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশি নাগরিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা পেতে যাচ্ছে। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর মধ্যস্থতায় এই অর্থ আদায় করা হয়েছে। ২০০৬ সালে দাম্মামে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবারকে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল এবং ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত আবিরণ বেগমের পরিবারকে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
দূতাবাস থেতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৬ সালের ২৭ জুন কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘ সময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শ্রম কল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন, সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারী হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন। থানা থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এরপর নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া ও অজ্ঞাত বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় তার পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুকূলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের দিকনির্দেশনায় শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরিকে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। অভিযুক্তের বাবা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারে আপস প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালে নিষ্পত্তিতে রাজি হন সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা। আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। গত ৬ ডিসেম্বর দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।
অন্যদিকে খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানির হাতে হত্যার শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর আজিজিয়া পুলিশ আয়েশা আল জিজানি, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির ও তাদের ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেফতার করে। বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের তিন সদস্যবিশিষ্ট বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালতের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ফুল বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদের ক্ষমার সম্মতি দিতে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করেন। সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও রাষ্ট্রদূতের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়।
অভিযুক্তের পরিবার আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে কাউন্সেলর (শ্রম) রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিচারক গত ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নিহত আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
সাগর পাটোয়ারী ও আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনও বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায়ের ঘটনা ঘটলো। নিহত দুই জনের পরিবার সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাস কর্মরত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এ মধ্যস্থতার ফলে দুই সৌদি নাগরিকের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় সৌদি সরকার এবং আসামিদের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করে।