মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে’

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ রোববার

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আর কয়েক দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যে পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তা কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস ও অধিকার লঙ্ঘনের মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। 

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন রাইট টু ফ্রিডম নামের একটি সংগঠন শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট। 

বিবৃতিতে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনকে সব ধরনের সম্পর্ক পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে রাইট টু ফ্রিডম। 

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছিল, আসন্ন নির্বাচনেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। তাই অনেক মাস ধরে বাংলাদেশের বন্ধুরা ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন। আগের ওই দুটি নির্বাচনে ভোটারদের অবাধে তাদের ভোটাধিকারের চর্চার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে ফল জালিয়াতি করেছে ক্ষমতাসীন দল। 

আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে রেখেছে সরকার। বাছাই করা কিছু প্রার্থীকে প্রতিযোগিতার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যদিয়ে আগের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর ঝুঁকি সুনির্দিষ্ট রূপ পেয়েছে। 

এ পর্যন্ত এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এবং তার দল পর্যায়ক্রমিকভাবে রাজনৈতিক প্রতিবাদের এবং ভিন্নমতের পরিসর বন্ধ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বহু মানবাধিকার গ্রুপ এবং বৈশ্বিক গণমাধ্যম বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, এই পরিবেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। 

উইলিয়াম বি মাইলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ব্যাপকভাবে বিবৃতি দিয়ে আসছে। কিন্তু তারা তা সম্ভব করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চাপ দিতে অনিচ্ছুক। 

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উৎসাহিত করার প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছে এমন অল্প কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এসব পদক্ষেপও পর্যাপ্ত নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। 

অন্যদিকে দেশে এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে চীন, রাশিয়া ও ভারত। 

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি এবং ঘনিয়ে আসা অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে রাইট টু ফ্রিডম। আমরা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের পক্ষে পরামর্শ দিয়ে আসছি। 

এখন নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। আমাদের বিশ্বাস, পদ্ধতিগতভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস ও অধিকারকে লঙ্ঘনের মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। 

এ অবস্থায় রাইট টু ফ্রিডম মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অ্যাক্টরদের বাংলাদেশ সরকারকে একটা পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে। তাদের বলতে হবে, যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন হলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের মতো স্বাভাবিক থাকবে না। 

বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসন এবং কংগ্রেসের প্রতি আমাদের আহ্বান, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পর্ক পর্যালোচনা করা হোক। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহায়তা, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বিষয়ে সহযোগিতা, বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক যোগাযোগসহ সব ধরনের সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। 

এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের বোঝাতে হবে যে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।