মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্কে ৭ বাংলাদেশি অপহরণকারী

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:১২ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৪ শনিবার

২ প্রবাসীকে অপহরণ ঘটনায় কমিউনিটিতে উদ্বেগ ও বিস্ময়

 

নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় একটি অপহরণ ঘটনায় কমিউনিটিতে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দুইজন বাংলাদেশিকে অপহরণের এই ঘটনার সাথে ৭ বাংলাদেশি জড়িত। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ে সংঘটিত এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ দলটির বিরুদ্ধে অপহরণ, দৈহিক নির্যাতন ও অপহৃতদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি ব্রুকলিনের একটি ফেডারেল আদালত তাদেরকে অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত বাংলাদেশিরা হচ্ছেন সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), শাহেদ আলম (২৯), আবু চৌধুরী (২৮), আনজু খান (২৮), সুলতানা রাজিয়া (৩৮) ও ইফফাত লুবনা (২৪)। এর মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী। এ ঘটনায় জড়িত অপর এক অভিযুক্ত পলাতক রয়েছেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে গত ১১ জানুয়ারি ইউনাইটেড স্টেটস এটর্নীর অফিসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অপহরণের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের সরকার পক্ষের আইনজীবী ব্রেয়ন পিস বলেছেন, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ অভিযুক্ত রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়া বাংলাদেশি ব্যক্তিকে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ১৮১ স্ট্রিটের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি হোন্ডা মিনিভ্যানে তুলে অপহরণ করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। তারা তাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে উলঙ্গ করে তা ক্যামেরায় ধারণ করেন। এ সময় অপহৃত ব্যক্তি পানি চাইলে চেতনানাশক মিশ্রিত পানি পান করায়। এতে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে পাওয়া যায়।
ব্রুকলিনের ফেডারেল কোর্টে গত ১১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সারাহ স্যাকস সুলতানা রাজিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন। তিনি দাবি করেন যে অপহৃত ব্যক্তির হাতে তার মক্কেল গত ৫ বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সুলতানা রাজিয়া এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার দাবি হচ্ছে যে অপহৃত ব্যক্তি রাজিয়ার চুল ধরে টানছিলেন এবং তিনি আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলেন। অপর ঘটনায় ২০২৩ সালের ১১ মে আবু চৌধুরী ও ইফফাত লুবনা নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডের ব্রডওয়ে এভিনিউর ৭২ স্ট্রিটের কাছে অপর এক বাংলাদেশিকে অপহরণ করেন।
অপহরণের অভিযোগ এবং আদালতে পেশকৃত আরজি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১১ মে থেকে তিন দিন পর্যন্ত চৌধুরী ও লুবনা জন ডো-১কে (ছদ্মনাম) অপহরণ ও নিপীড়ন করেছিল। জন ডো-২(ছদ্মনাম) উডসাইডের ৭২ স্ট্রিট ও ব্রডওয়ের পাশে এক রেস্টুরেন্টের বাইরে লুবনার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন চৌধুরী জন ডো-২ কেও জোর করে একটি মিনিভ্যানে তুলে প্রহার শুরু করেন।
অপহরণের পর চৌধুরী ও লুবনা জন ডো-২কে একটি হোটেলে নিয়ে যায় এবং জন ডো-২ এর ওপর চৌধুরী যৌন নিপীড়ন করেন। এছাড়াও চৌধুরী জন ডো-২ এর পিতার কাছে ফোন করে তার পুত্রের মুক্তিপণ হিসেবে ২০ হাজার ডলার দাবি করেন। অভিযুক্তরা তাকে পুলিশের কাছে যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করেন। অপহরণের তৃতীয় দিনে চৌধুরী জন ডো-২ কে বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রেখে যান। জন ডো-২ দাঁত দিয়ে তার বাঁধন কেটে, জানালা ভেঙে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ৯১১ নম্বরে কল করতে অনুরোধ জানিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে, অফিস’স জেনারেল ক্রাইম সেকশন কর্তৃক। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইউনাইটেড স্টেটস অ্যাটর্নি স্টেফানি পাক এবং প্যারালিগ্যাল এক্সপার্ট ভিনসেন্ট চিয়াপিনি, ক্যাটরিনা বাতিস্তা যৌথভাবে প্রসিকিউশনের দায়িত্বে রয়েছেন।
আইনজীবীরা বলছেন, অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে। ডিস্ট্রিক্ট জজ নিনা মরিসনের আদালতে পরবর্তী শুনানির জন্য হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আবু চৌধুরী ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ও তার স্ত্রী ইফফাত লুবনা ১ লাখ ডলারের জামিনে রয়েছেন। আনজু খান ও শাহেদ আলমকে বিনা জামিনে আটক রাখার আদেশ দিয়েছে আদালত। রুবেল আহমদকে ১ লাখ ডলার এবং রাজিয়াকে ৫০ হাজার ডলারের বন্ডে হোম ডিটেনশনের আদেশ দিয়ে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এই সংঘবদ্ধ চক্রটির ২ বাংলাদেশিকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুখে মুখে। জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় ঘটনাটি এখন টক অব দ্য কমিউনিটি। জ্যামাইকা এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা নানা আশঙ্কার কথা বলছেন। অপরাধী ৭ জনের ৩ জনই এলাকায় পরিচিত। ছোট ধরনের ব্যবসার সাথে তারা জড়িত। হিল সাইডের ২০৪ স্ট্রিটে আবু চৌধুরী ও লুবনার একটি গ্রেসারী দোকানও ছিল। তারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে প্রথমে অনেকেই বিশ্বাস করছিলেন না। মূলধারা ও কমিউনিটির মিডিয়ায় এই ঘটনার খবর গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হচ্ছে।
জ্যামাইকা বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাব্বি সৈয়দ আজকালকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ঘটনায় আমরা বিব্রত। কেন এমন ঘটনা ঘটছে তা খুঁজে বের করতে হবে। জ্যামাইকায় ড্রাগের কারবার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তার প্রভাব পড়ছে কমিউনিটির ওপর। ভাবতে অবাক লাগে আমাদের আশপাশেই অপরাধীরা চলাফেরা করছে। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের উচিত ড্রাগ ও অপরাধ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেয়া।
কমিউনিটি ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আল আমীন রাসেল বসবাস করেন জ্যামাইকায়। তিনি আজকালকে বলেন, কমিউনিটির অনেক লোকজন, বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা ছিনতাই ও ড্রাগের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যে ঘটনাটি ধরা পড়লো তা কমিউনিটির ভাবমূর্তিকে খাটো করলো। আমাদের যারা মূলধারায় কাজ করেন, তাদের উচিত প্রশাসনের সাথে সংলাপের মাধ্যমে কমিউনিটিকে অপরাধ ও ড্রাগের কবল থেকে উদ্ধার করা।