বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশি দম্পতির জানাজা সম্পন্ন : আজ দাফন

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:৩৩ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার

নিউইয়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা

পুলিশ অপরাধীকে ধরতে গিয়ে অন্যের জীবন বিপন্ন করে ফেলছে!
 
নিউইয়র্কের উডবারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি দম্পতি হাফিজ আহমেদ (৫২) এবং তার স্ত্রী সাথী আহমেদ (৪১) এর জানাজা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব তাদের জানাজায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অংশ নেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম নিহত দম্পতির মেয়ে রাইদার (১০) অবস্থা এখনও সঙ্কাটপন্ন। সে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া রাইদাকে দেখভাল করার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে নিউইয়র্ক স্টেট। আগামী এক মাস রাইদাকে দেখভাল করার জন্য হাসপাতালের কাছে একটি হোটেল রুমে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার গভীর রাতে নিউইয়র্কের কাছে উডবারি শহরে লং মাউন্টেন পার্কওয়ে-রুট-৬-এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বলে নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে।
নিউইয়র্কের পুলিশ জানিয়েছে, তারা একটি গাড়ির অতিরিক্ত স্পীডের কারণে গতিরোধ করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু গাড়িটির চালক তা না মেনে আরো দ্রুতগতিতে প্রায় প্রতি ঘন্টায় ১০০ মাইল উপরে গতিতে চালাচ্ছিলেন। অফিসাররা জানিয়েছেন, তাদের ধাওয়ার ফলে এবং অতিরিক্ত স্পীডের কারণে চালক গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে অন্য একটি এসইউভিকে আঘাত করে। প্রচন্ড ধাক্কায় ওই গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এসইউভির গাড়িটির যাত্রী ছিলেন নিহত হাফিজ আহমেদের পরিবার। সেই সময় পুলিশের একটি গাড়িও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
দুর্ঘটনা স্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভালহাল্লার ওয়েস্টচেস্টার মেডিকেল সেন্টার এবং ওয়ালকিল শহরের গার্নেট হেলথ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
কে-৯, অরেঞ্জ কাউন্টি সোয়াট টিম, ড্রোন এবং রকল্যান্ড কাউন্টি থেকে একটি হেলিকপ্টার-সহ দুর্ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেফতারের জন্য হ্যারিম্যান স্টেট পার্কের জঙ্গলে খুঁজতে থাকেন। কারণ দুর্ঘটনার পর পরই দুই ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বিংহ্যামটনে নতুন কেনা বাড়ি দেখতে যাচ্ছিলেন হাফিজ আহমেদ। হঠাৎ উডবারির লং মাউন্টেন পার্কওয়েতে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাদের গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়। আহত অবস্থায় তাদের হাসাপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা হাফিজ ও তার স্ত্রী সাথীকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত হাফিজ আহম্মেদের বাড়ি গাজীপুরে এবং তার স্ত্রী সাথী আহম্মেদের বাড়ি বরিশালে। পরিবারের চার সদস্যসহ তারা দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কেই থাকতেন। নিহত সাথী নিউইয়র্কে গাজীপুর সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। দুজনের মৃত্যুতে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি এই দম্পতির লাশ অরেঞ্জ কাউন্টি মর্গ থেকে বিকেলে জ্যামাইকা মসিলিম সেন্টারে আনা হয়। সেখানে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার লং আইল্যান্ড মুসলিম গোরস্থানে তাদের দাফন করা হবে। বাংলাদেশি দম্পতির জানাজা দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ইয়েলো সোসাইটি।
জানা যায়, নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীতে মালামাল সরবরাহ কাজের ঠিকাদার ছিলেন হাফিজ আহমেদ। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, হাফিজ আহমেদ ইউএস আর্মির কোরস অব ইঞ্জিনিয়ার্স নর্থ আটলান্টিক ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। নিউইয়র্কে তারা থাকতেন ব্রুকলিনের ফার রকওয়েতে।
হাফিজ আহমেদের বাবা শামছুল হক মুন্সি ১৯৯১ সালে ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকা আসেন। পরে ১৯৯৬ সালে পরিবারের সদস্যদের সবাইকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন। চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাচনমেঘ গ্রামের তাদের পৈতৃক বাড়ি।
এদিকে হাফিজ আহমেদ ও সাথী আহমেদের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন। অনেকে তাদের মৃত্যু নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাংলাদেশি বলছেন, পুলিশের কাজ জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু পুলিশ অপরাধীকে ধরতে গিয়ে অন্যের জীবনকে বিপন্ন করে ফেলছে। এই মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।