হয়রানি করতেই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
আজকাল রিপোর্ট
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:০১ এএম, ২ মার্চ ২০২৪ শনিবার
সিএনএনকে সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সিএনএন এর রিপোর্টার ক্রিস্টিয়ান আমানপোরকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। গত সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। সাক্ষাৎকারে ইউনূস অভিযোগ করে বলেন, নানা ভাবে হয়রানি করার জন্যই সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ করছে।
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জানতে চান, আপনি সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে বিশেষ করে নারী ও লাখো দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে যা করেছেন সেসব বিষয় নিয়ে এর আগে বহুবার আমাদের মধ্যে আলাপ হয়েছে। কিন্তু এখন আপনার বিরুদ্ধে খুবই গুরুতর আইনি অভিযোগ আনা হয়েছে। আপনাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে আমরা দেখলাম এবং জানলাম যে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়া হচ্ছে। আপনি কি বলবেন যে আসলে কী হচ্ছে? কী হচ্ছে বিজনেসের ক্ষেত্রে। কারণ আপনি বলেছেন সেগুলো জোর করে দখলে নিয়েছে।
জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, হ্যাঁ। ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটছে। ৩৫ জনের একটি দল আমাদের ভবনে জোর করে ঢুকে পড়ে। আমরা যে সামাজিক ব্যবসাগুলো তৈরি করেছিলাম, যার অনেকগুলো দেশের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যবসা, সেই ভবন থেকে পরিচালিত হয়। কী হচ্ছে সেখানে, এটা নিয়ে সবাই ভয় পাচ্ছিলেন, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারা তখন জানায় যে তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এসেছে। তারা কিছু কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। তাদের দাবি, এগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং এ জন্য তারা এখন সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে এবং তারা এইসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিচ্ছে।
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর জানতে চান, সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে। সেখানে কিছুই জোর করে বা বেআইনিভাবে করা হচ্ছে না বলে বলা হচ্ছে। তাহলে কেন এটা ঘটছে? আপনাকে কি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে? আপনাকে কি বলা হয়েছে যে এটা কেন হচ্ছে?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনার যদি কোনো দাবি থাকে, কোনো আইনি ইস্যু থাকে, তাহলে সেগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য আপনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু সেগুলোর জন্য আপনি হঠাৎ করে জোর করে কোনো ভবনে ঢুকে যেতে পারেন না এবং বলতে পারেন না যে এগুলো আমরা নিয়ে নিচ্ছি।
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর প্রশ্ন করেন, তারাই কি এখন সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে? নাকি আপনি আপনার প্রপার্টি ফিরে পেয়েছেন? কী অবস্থা এখন সেগুলোর?
জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা সেগুলো ফিরে পেয়েছি। আমরা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেখানে আমরা আমাদের ভবনে দেশের সব গণ্যমাধ্যমকর্মীকে আসার অনুরোধ করি এবং কী ঘটছে সেগুলো বিস্তারিতভাবে জানাই। তারপর থেকে আমরা আমাদের ভবনের নিয়ন্ত্রণে আছি এবং তারা আর আসেনি।
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর আবার প্রশ্ন করেন, আপনার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, এসব ইস্যুতে আপনাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অনেক বিশিষ্টজন, যাদের মধ্যে নোবেল জয়ীরা আছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন। আপনার কী মনে হয়, এরপর কী হবে? আপনাকে কারাভোগ করতে হবে?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি এরই মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত। যেকোনো সময় আমার জামিন বাতিল হতে পারে। তারা আমার জামিন বাড়াতে পারে, নয়তো আমার কিংবা আমার সঙ্গে আরও যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের সবাইকে জেলে দিতে পারে। মার্চের ৩ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা নতুন একটি মামলায় আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে মানি লন্ডারিং ও আরও বেশকিছু ইস্যুতে কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা যদি পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাই, তাহলে ওই মামলায় আরও দীর্ঘ সময়ের কারাদন্ডও দিতে পারে। আমরা জানি না এগুলো কবে শেষ হবে।
ক্রিস্টিয়ান আমানপোর আবার জানতে চান, শ্রমিকদের জন্য আপনি কল্যাণ ফান্ড গঠন করতে পারেননি সরকার এমন অভিযোগ করেছে। এ ধরনের আরও অনেক অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। আপনি এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন। আপনার কী মনে হয়, কেন আপনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে? এর কারণ কী?
উত্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমিই শুধু নাকচ করেছি তা নয়। এ নিয়ে দেশের ও দেশের বাইরের যেসব আইনজীবীর সঙ্গেই আলোচনা করেছি, তারা সবাই সম্মত হয়েছে যে এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই এবং তারা এ ধরনের কোনো মামলা এর আগে দেখেননি ও পরিচালনা করেননি। এটা একধরনের হয়রানি। এটা নিশ্চিত করা যে আমি বা আমরা এই বার্তা পাচ্ছি যে আমাদেরকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না।
নাভালনির মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইউক্রেনে অবস্থানরত আমানপোর ড. ইউনূসের কাছে জানতে চান আপনি কি বিদেশে থাকার প্রস্তাব পেয়েছেন?
উত্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, হ্যা, আমি অনেক বিদেশি বন্ধুর কাছ থেকে এই দেশ ছেড়ে তাদের দেশে চলে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং আমার কাজ যাতে সারাবিশ্বে চলতে পারে তার সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে এগুলো শুরু করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আমি শিক্ষকতা করতাম। তারপর আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমি যা করেছি, তা সবই সাধারণ মানুষের জন্য। আমি দুর্ভিক্ষ দেখেছি, মানুষের বিভিন্ন সমস্যা দেখেছি। যে কারণে আমি চিন্তা করেছি গরিব মানুষ যেন উপকৃত হয়। এটাই আমার আকাক্সক্ষা, এটাই আমার জীবন। যার ফলে ক্ষুদ্র ঋত এসেছে এবং বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে।