সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মহাকাশে যাচ্ছেন প্রথম আরব নারী আল মাতরুশি

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:৪৬ এএম, ৯ মার্চ ২০২৪ শনিবার


 
নোরা আল মাতরুশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকাধারী নীল ফ্লাইট স্যুটে মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আরব আমিরাতের মহাকাশচারী নোরা আল মাতরুশি তার পূর্বপুরুষদের মতো নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় আকাশে তারার দিকে তাকিয়ে এবং চাঁদে ওড়ার স্বপ্ন দেখে কাটিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তিনি নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগাম থেকে স্নাতক হওয়া প্রথম আরব মহিলা নভোচারী হিসেবে মহাকাশ যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আল মাতরুশি (৩০) মহাকাশ সম্পর্কে শৈশবে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন। সেখান থেকে মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তিনি।
আল মাতরুশি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, যিনি তেল শিল্পে কাজ করেছেন। ২০২১ সালে অ্যামেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত আরব আমিরাত স্পেস এজেন্সির (ইউএইএসএ) নির্বাচিত দুই মহাকাশচারীর মধ্যে তিনি একজন ছিলেন।
এখন স্পেসওয়াকসহ দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর, আল মাতরুশি তার সহকর্মী আমিরাতি মোহাম্মদ আলমুল্লা ও তাদের প্রশিক্ষণ ক্লাসে থাকা অন্য ১০ জন মহাকাশচারী নির্বাচিত হয়েছেন। ‘দ্য ফ্লাইস’ নামে পরিচিত এই দলটি এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আএসএস) মিশনের জন্য যোগ্য এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর্টেমিস চন্দ্র মিশন এমনকি মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত।
আল মাতরুশি বলেন, ‘আমি মানবতাকে আগের চেয়ে আরও এগিয়ে দিতে চাই। আমি চাই মানুষ চাঁদে আবারও যাক। আমি চাই মানুষ চাঁদের বাইরে দূর মহাকাশের দিকে আরও এগিয়ে যাক। আমি সেই যাত্রার অংশ হতে চাই।’
আল মাতরুশিই নাসা থেকে স্নাতক হওয়া প্রথম আরব নারী। অন্যান্য আরব নারীরা এর আগে ব্যক্তিগত মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছেন।
যার মধ্যে রয়েছেন সৌদি বায়োমেডিকেল গবেষক রায়নাহ বারনাভি। যিনি অ্যাক্সিওম স্পেস দিয়ে গত বছর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) উড়ে গিয়েছিলেন।
এছাড়াও রয়েছেন, ইজিপশিয়ান-লেবানিজ ইঞ্জিনিয়ার সারা সাবরি। যিনি একটি ২০২২ ব্লু অরিজিন সাবঅরবিটাল ফ্লাইটে ক্রু ছিলেন।
আল মাতরুশি নিজের মুসলিম বিশ্বাসের অংশ হিসাবে হিজাব পরেন। তিনি বলেন যে, নাসা তাকে এজেন্সির আইকনিক সাদা স্পেস স্যুট ও হেলমেট দেওয়ার সময় তার চুল ঢেকে রাখার অনুমতি দেয়ার জন্য একটি কৌশল তৈরি করেছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট (ইএমইউ) নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, ‘একবার ইএমইউতে প্রবেশ করলে একটি কমিউনিকেশন ক্যাপ (মাইক্রোফোন ও স্পিকার লাগানো) পরানো হয় যা চুল ঢেকে রাখে।’
আল মাতরুশি বলেছেন ‘স্যুট ইঞ্জিনিয়াররা আমার জন্য একটি অস্থায়ী হিজাব সেলাই করেছেন। যেন আমি সেটা পরতে পারি ও স্যুটে উঠতে পারি এবং তারপরে কমিউনিকেশন ক্যাপ পরতে পারি এবং তারপরে তা খুলে ফেললে আমার চুল ঢেকে যায়। এই উদ্যোগের জন্য আমি সত্যিই তাদের প্রশংসা করি।’
তার কাস্টমাইজড স্যুটের সঙ্গে আল মাতরুশি তার সহকর্মী নভোচারীদের সঙ্গে মহাকাশে পা রাখার জন্য প্রস্তুত হবেন। নাসা আর্টেমিস ৩ মিশনের জন্য ২০২৬ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের অবতরণের পরিকল্পনা করেছে।
তিনি এএফপিকে বলেন ‘আমি মনে করি একজন মহাকাশচারী হওয়া কঠিন, আপনার ধর্ম বা আপনার পটভূমি যাই হোক না কেন। আমি মনে করি না যে, একজন মুসলিম হওয়া এটাকে কঠিন করেছে। কিন্তু একজন মুসলিম হওয়া আমাকে আমার পূর্বপুরুষদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করেছে। আমার আগে আসা মুসলিম পন্ডিত এবং বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করেন। আমি একজন মহাকাশচারী হয়ে উঠছি শুধু সেই উত্তরাধিকারের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলছি যা তারা হাজার হাজার বছর আগে শুরু করেছিলেন।’