সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চলন্ত প্লেনে মাঝ আকাশেই আধাঘণ্টা ঘুম, বহিষ্কার ২ পাইলট

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১১ মার্চ ২০২৪ সোমবার

চলন্ত বাস কিংবা ট্যাক্সিতে চালকের চোখ লেগে যাওয়ার সাক্ষী মোটামুটি আমরা কম-বেশি সবাই। কিন্তু শতাধিত যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে যদি প্লেনের পাইলট কোনো কারণে ঘুমিয়ে পড়েন? সে ক্ষেত্রে একটাই ভরসা হতে পারে যে, যাত্রীবাহী প্লেনে সাধারণত সহকারী পাইলট থাকেন। ইমার্জেন্সি কিংবা মানবতার খাতিরে তিনি সিচুয়েশনটা ম্যানেজ করে দিতে পারেন। কিন্তু যদি দু’জন একই সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন?

ভাবতে বুক কাঁপলেও বাস্তবে কিন্তু এমনটাই ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ার বাতিক এয়ারলাইন্সের এ৩২০ এয়ারবাসে! সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ইন্দোনেশিয়ান কর্তৃপক্ষের প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে এয়ারলাইভডটনেট। এরই মধ্যে ওই দুই পাইলটকেই সাময়িক বহিষ্কার করেছে বাতিক এয়ারলাইন্স।

ঘটনা চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারির, কিন্তু প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। যাত্রাপথে একটি বিরতির পর শিডিউল মেনেই সাউথ-ওয়েস্ট সুলাওয়েসি থেকে জাকার্তার দিকে যাচ্ছিল প্লেনটি। সূত্রের খবর, প্লেনটি যখন মাটি থেকে ৩৬ হাজার ফুট উঁচুতে, তখন দুই পাইলটই নিজেদের হেডসেট খুলে ফেলেন ও ককপিটের লাউডস্পিকারের ভলিউম বাড়িয়ে দেন। তারপর? কোনো পাইলটের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে না পেরে প্রথম ‘গোলমাল’ টের পায় জাকার্তার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, একটা সময় দ্বিতীয় পাইলটের কাছে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়ার আর্জি জানান ৩২ বছর বয়সী পাইলট-ইন-কমান্ড। সহকারী আশ্বাস দেওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।

প্রায় আধঘণ্টা ঘুমিয়ে চমকে উঠে মূল পাইলট দেখেন ২৮ বছর বয়সী সহকারী পাইলটও ঘুমিয়ে পড়েছেন! ততক্ষণে নির্দিষ্ট রুট থেকে খানিকটা সরে গেছে প্লেন। তড়িঘড়ি ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে কথা বলে নিজস্ব রুটে ফেরেন তারা। যথাসময়ে গন্তব্যেও নামে প্লেনটি।

তদন্তে উঠে এসেছে, মাঝ আকাশে ২৮ মিনিট অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন দুই পাইলটই! ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে উড়ছিল বিমান। দুই পাইলট বাদে চারজন ক্রুও ছিলেন ফ্লাইটে। ভাগ্য ভালো যে, রুট থেকে সামান্য সরে গেলেও বড় কোনো বিপদ ঘটেনি। যাত্রীরা সবাই সুরক্ষিত ছিলেন। কিন্তু ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

জানা গেছে, আগের দিন টানা প্লেন চালানোর পরে পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি প্রধান পাইলটের। আর তাছাড়া তিনি যেহেতু সহকারীকে জানিয়েই বিশ্রামে গিয়েছিলেন, তাই তাকে সেভাবে দোষ দেওয়াও যায় না। কিন্তু পাইলট-ইন-কম্যান্ড ঘুমাচ্ছে জেনেও দ্বিতীয় পাইলট কীভাবে ঘুমিয়ে পড়লেন?

সহকারী পাইলটের দাবি, তারও নাকি ঘুমের বড্ড অভাব। মাসখানেক আগে তার স্ত্রীর যমজ সন্তান হয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে হলেও সংসার সামলাতে গিয়ে তারও ঘুম ছুটেছে।

সমীক্ষা বলছে, ককপিটে বসে বিমান চালাতে চালাতে ঢুলুনি আসে মোটামুটি ৯৫ শতাংশ পাইলটের। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশের প্রচণ্ড ঘুম পায়। এমনকি, ককপিটে প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস আছে ৬৬ শতাংশ পাইলটের। সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন নামে ভারতীয় এনজিও’র সমীক্ষা মূলত ভারতীয় পাইলটদের নিয়ে হলেও গোটা বিশ্বে চিত্রটা মোটামুটি একই বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।