এবার মন্ত্রী চায় নারায়ণগঞ্জবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:২৫ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আবারও ক্ষমতায় আরোহণ করেছে ম্যাজিক লেডি খ্যাত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। আর তারই পথ ধরে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও সফলতা পেয়েছে দলটি।
শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁসা এই জেলার ৫টি আসনের মধ্যে ৩টিতে নৌকা ও ২টিতে লাঙ্গল প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে মহাজোটের প্রার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবু।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বিজয়ী হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জয়ী হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জয়ী হয়েছেন।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই গঠন করা হবে মন্ত্রিসভা। আর সে কারণেই এবার আলোচনায় চলে এসেছে নারায়ণগঞ্জ। এবারও কী মন্ত্রীসভায় থাকবে নারায়ণগঞ্জ নাকি বাদ পড়বে সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
তবে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা এবার তারা মন্ত্রী পাবেন। তাদের গাড়িতে লাগবে লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (আওয়ামী লীগ) সরকারের সময় (১৯৭৩ এর নির্বাচনে) এমপি হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের ভাষা সৈনিক একেএম সামসুজ্জোহা। সত্তর দশকের শেষের দিকে জিয়াউর রহমানের (বিএনপি) শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ থেকে এম এ সাত্তারকে পাটমন্ত্রী করা হয়।
আশির দশকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের (জাতীয় পাটি) শাসনামলে সোনারগাঁয়ের আ ন ম বাহাউল হককে উপমন্ত্রীর পদমর্যায় জেলা পরিষদের চেয়াম্যান করা হয়। প্রথম উপমন্ত্রীও পেল নারায়ণগঞ্জবাসী।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে আব্দুল মতিন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসীর কপালে মন্ত্রী জোটেনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনটি ও তাদের শরিক জাতীয় পাটি দুটি আসনে এমপি নির্বাচিত হয়। কিন্তু মন্ত্রিসভায় স্থান নেই নারায়ণগঞ্জ জেলার।
মন্ত্রী হিসেবে কে সম্মান বয়ে আনবেন নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য? সে আলোচনা সর্বত্র। তবে আলোচনায় জানান দিয়েছেন, জেলার ২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু।
এর কারণ হিসেবে এলাকাবাসী জানান, তার হাতের ছোঁয়ায় আমরা স্বপ্ন দেখছি আধুনিক নারায়ণগঞ্জের। শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষে এটা হবে বাংলার সিঙ্গাপুর। আর সে স্বপ্ন এগিয়ে নিতে আমরা বাবুকেই সামনে রাখি।
সরেজমিন দেখা গেছে, এলাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে শিক্ষা খাতের অবকাঠামোর উন্নয়ন, অধিকাংশ ঘরে আবাসিক গ্যাস সরবরাহ, নির্মাণাধীন কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ফলিত, পুষ্টি ও গবেষণা ইনস্টিটিউ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, খাগকান্দা নদী-ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন জনদরদি এই নেতা। যার দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবে জনগণ। তার জনহিতকর কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সমাজহিতৈষীগণ সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের মতে জনমত জরিপে আলহাজ নজরুল ইসলাম বাবু জনপ্রিয়তায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার নেতৃত্বের জাদুর ছোঁয়ায় বদলে গেছে তার নিজ এলাকার গোটা দৃশ্যপট।
যেভাবে বেড়ে ওঠেন নজরুল ইসলাম বাবু
১৯৬৭ সালে আড়াইহাজার উপজেলার বাজবী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া বাবু দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক এবং সবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেন।
ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করতে হয় তাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিন ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নজরুল ইসলাম বাবু।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শিকারও হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম বাবু। সেখানে অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। ২০০৮ ও ২০১৪ পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর এতেই পাল্টে যায় আড়াইহাজারবাসীর ভাগ্য।
সংসদ সদস্য হিসেবে হ্যাট্রিক করা বাবু মন্ত্রী হয়ে নারায়ণগঞ্জকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। তাছাড়া তার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও সারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এমনই প্রত্যাশা সবার।