রোববার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৭ ১৪৩১   ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নেই রাত জাগার ভোগান্তি, বদলে গেছে কমলাপুর রেলস্টেশন

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৬ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৪ মঙ্গলবার

এক সময় ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেই রাত জেগে কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়াতেন হাজার হাজার মানুষ। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর যখন প্রত্যাশিত টিকিট হাতে পেতেন তখন রাত জাগার ক্লান্তি ভুলে অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেন।

সময়ের বিবর্তনে রেলের টিকিট কাটার পদ্ধতি বদলে গেছে। এখন কাউন্টার থেকে ঈদের কোনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় না। শতভাগ টিকিট বিক্রি হয় অনলাইনে। ফলে কমলাপুরে আর রাত জেগে ঈদের টিকিটের জন্য কাউকে অপেক্ষা করতে দেখা যায় না।

টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের আনাগোনা না থাকায় কমলাপুর রেলস্টেশনের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। কাউন্টারের সামনের জায়গাগুলো যেখানে টিকিট প্রত্যাশীদের উপস্থিতিতে টইটম্বুর থাকতো, এখন সেই জায়গাটি প্রায় পুরো ফাঁকা। ফলে কমলাপুর রেলস্টেশনের ভেতরে ঢোকার ভোগান্তিও অনেকটা কমে গেছে।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের টিকিট কাউন্টারগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। একটি কাউন্টারে গুটি কয়েক মানুষকে টিকিট কাটতে দেখা যায়।

কথা হলে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা মিজানুর রহমান বলেন, গাজীপুরে যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকিট পাইনি। তাই এখান থেকে স্ট্যান্ড টিকিট সংগ্রহ করলাম।

আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে পরিবারের সদস্যদের তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন হামিদুর রহমান। তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি দর্শনা। ছেলে-মেয়ের স্কুল বন্ধ তাই ওদের আগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। অনলাইনে টিকিট কেটেছে, কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি বলেন, আগে স্টেশনে এসে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কাটতে হতো। এখন সেই অবস্থা নেই। টিকিট কাটার পদ্ধতি অনেকটাই সহজ হয়েছে। তবে ঈদের সময় ট্রেনের টিকিট পাওয়ার ভোগান্তি এখনো রয়েই গেছে। কারণ অ্যাপে প্রবেশ করতে করতেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, টিকিট কাটার জন্য এখন এনআইডি মোবাইল নম্বর নিয়ে নিবন্ধন করা আছে। এরপরও অনলাইনে ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটার ভোগান্তি শেষ হয়নি। অনলাইনে প্রবেশ করতে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়, এটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। ৫ এপ্রিলের টিকিটের জন্য আজ সাড়ে ৮টার দিকে অ্যাপে প্রবেশ করে দেখি সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

সুন্দরবন এক্সপ্রেসের কুষ্টিয়ায় যাওয়ার জন্য কমলাপুর স্টেশন আসা ফরিদ হোসেন বলেন, আগে কমলাপুর স্টেশনে এলেই দেখলাম টিকিট কাউন্টারে অসংখ্য মানুষের ভিড়। এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। কমলাপুর রেলস্টেশনের চিত্র বদলে গেছে। সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় মানুষের টিকিট কাটার ভোগান্তি এখন অনেক কমে গেছে।

তিনি বলেন, কমলাপুর স্টেশনে এখন দালালদের আনাগোনা কম। তবে নতুন করে বাঁশের যে লাইন দেওয়া হয়েছে সেটা স্টেশনের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। স্টেশনের ভেতরে এভাবে বাঁশ দিয়ে লাইন আগে কখনো দেখিনি। ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগেই লোহার লাইন রয়েছে। সুতরাং নতুন করে আবার বাঁশ দিয়ে লাইন করার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।

ইদ্রিস হোসেন নামের একজন বলেন, আগে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেই রাত জেগে মানুষ কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে অপেক্ষা করত। আমি নিজেও একাধিকবার ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে রাতে কমলাপুর স্টেশন এসে থেকেছি। সারারাত জেগে থাকার পর সকালে যখন ট্রেনের টিকিট হাতে পেতাম মনে হতো সোনার হরিণ পেয়েছি। এখন সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। আর রাত জেগে কমলাপুরে টিকিট কাটতে আসতে হয় না।

তিনি বলেন, এখন টিকিট কাটার পদ্ধতি সহজ হয়েছে। কিন্তু ঈদের অগ্রিম টিকিট পাওয়ার ভোগান্তি পুরোপুরি দূর হয়নি। অনেক সময় অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। তবে ঈদের অগ্রিম টিকিট বেশিরভাগ সময় অনলাইনে পাওয়া খুবসাধ্য হয়ে পড়েছে। টিকিট কাটার জন্য অ্যাপে প্রবেশ করা যেমন কঠিন তেমনি টিকিট পাওয়া কঠিন। অনেক কষ্ট করে এত প্রবেশ করতে পারলেও দেখা যায় কোনো টিকিট নেই। আবার কিছু ক্ষেত্রে ফাঁকা টিকিট সিলেক্ট দিয়ে পেমেন্টের করতে গেলে কোনো একটা সমস্যা দেখা দেয়, তখন আর টিকিট কাটা যায় না। অ্যাপের এ সমস্যা দূর হলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে যেত।

কমলাপুর স্টেশনের ভিতর বাঁশ দিয়ে লাইন করা হলেও, সেই লাইনে রেলের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায় কি। তবে মূল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতেই কয়েকজন কর্মকর্তাকে যাত্রীদের টিকিট চেক করতে দেখা যায়।

স্টেশনের ভেতরে বাঁশ দিয়ে লাইন করার কারণ কি জানতে চাইলে তথ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত এক নারী কর্মকর্তা বলেন, মানুষ যাতে সুশৃঙ্খলভাবে স্টেশনে প্রবেশ করে এবং যাত্রীদের বাইরে অন্যান্য মানুষ যাতে স্টেশনের ভেতরে অকারণে ঘোরাঘুরি না করে সে জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বাঁশের লাইন ঈদের সময়ের জন্য। কারণ এদের সময় যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। ফলে ষ্টেশন এলাকায় ভিড়ও বেশি হয়। যে জায়গাটিতে বাঁশের লাইন দেওয়া হয়েছে, সেখানে আগে যাত্রী নয় এমন অসংখ্য মানুষ ঘোরাঘুরি করতো। অনেকে জায়গাটিতে গাড়ি পার্কিং করেও রাখতেন। এখন বাঁশের লাইন থাকাই এখানে কেউ অকারণে ঘোরাঘুরি করতে পারছে না এবং গাড়ি পার্কিংয়েরও সুযোগ পাচ্ছে না।