রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:০০ এএম, ৩০ মার্চ ২০২৪ শনিবার

আজ নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ


যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের বাড়িতে মায়ের সামনেই পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছেন। গত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে নিউইয়র্কের ওজন পার্কের ১০১ অ্যাভিনিউ ও ১০৩ স্ট্রিটে এ ঘটনা ঘটে। নিহত উইন রোজারিওর বয়স মাত্র ১৯ বছর। বাংলাদেশে তাদেও গ্রামের বাড়ি গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের পূবাইলে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, উইন রোজারিও মানসিকভাবে বিষণœ ছিলেন এবং সাহায্যের জন্য তিনি নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতে পৌঁছে তারা উইনকে কাঁচি হাতে দেখতে পান। একপর্যায়ে কাঁচি নিয়ে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে যান। এরপর পুলিশ গুলি চালালে উইন মারা যান। তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উইনের ১৭ বছর বয়সী ছোট ভাই উৎস রোজারিও পুলিশের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। উৎস বলেন, পুরো ঘটনার সময়ই মা তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। তখন তারা তাকে টেজার দিয়ে গুলি করে। টেজার দিয়ে গুলি করার পরও আমার ভাই নিচে পড়ে যাননি। তাই একজন পুলিশ বন্দুক বের করে তাকে গুলি করে এবং সে সময়ও আমার মা তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন। তিনি বলেন, এভাবে গুলি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। উৎস বলেন, প্রথমত, দুজন পুলিশ অফিসার সেখানে ছিলেন এবং আমার মা আগে থেকেই তাকে ধরে রেখেছিলেন, তাই তিনি সত্যিই কিছু করতে পারতেন না।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও ও মা ইভা ডিকস্টা পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেছেন। তারা গণমাধ্যমকে বলেন, তার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গুলি করেছে, হত্যা করেছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
পেট্রল পুলিশ বিভাগের প্রধান টহল জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘৯১১ এ মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ এক ব্যক্তির কলে সাড়া দিতে গিয়ে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ওই বাসায় যাবার পর, উইনকে তারা নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের দিকে ছুটে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। আর তখন উইন কাঁচি তুলে আবার অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন। এই পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’
উইনকে কতবার গুলি করা হয়েছে পুলিশ তা জানায়নি। তবে পরিবারের দাবি, তাকে ছয়টি গুলি করা হয়েছে। এই পুরো ঘটনা পুলিশের ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান চেল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সেই ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি। উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, ১০ বছর আগে তারা সপরিবারে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন ছিল উইনের। তবে গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তিনি বলেন, উইন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর অল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে ছেলে হত্যার অভিযোগ এনে বলেন, আমার নিরপরাধ ছেলে হত্যার বিচার চাই।
উইনের মা ইভা ডি কস্তা বলেন, পুলিশ হলেন জনগণের সেবক। জনগণের বন্ধু। তারা জনগণের নিরাপত্তা দেন। পুলিশ তো জনগণকে মারতে পারে না। আমার ছেলে তো কোনো উৎপাত করেনি। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
উৎস রোজারিও বলেন, উইন দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। কিছু দিন ধরে তিনি বেশ বিষণœতার মধ্যে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত দুই মাসের মধ্যে নিউইয়র্কে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধদের মধ্যে উইন হচ্ছেন তৃতীয় ব্যক্তি। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা উইনের মৃত্যুর বিচার দাবি করেছেন। সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, মাত্র ১৯ বছরের একটি ছেলে, যার কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তাকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আমরা চাই এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।