বাংলাদেশি তরুণ রোজারিও হত্যার প্রতিবাদে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১৩ এএম, ৩১ মার্চ ২০২৪ রোববার
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিওকে (১৯) হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সেখানকার প্রবাসীরা। এ সময় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ মার্চ) নিউইয়র্কে কুইন্সের জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজায় এ সমাবেশ হয়। প্রবাসী বাঙালি খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন ও লাল মরিচ নামে দুটি সংগঠন আলাদাভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে বক্তারা উইন রোজারিও হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। তারা বলেন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন ইস্টার সানডে যেন এবার বিষাদে পরিণত হয়েছে। উইন রোজারিওর মৃত্যুর ঘটনার পর কমিউনিটি থেকে দাবি উঠলেও পুলিশের শরীরে থাকা ক্যামেরার কোনো ফুটেজ এখনও প্রকাশ করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সমাবেশে এ ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা।
‘প্রবাসী বাঙালি খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বকারীরা। ছিলেন পেশাজীবী এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীরাও। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখায় এই সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, উইন রোজারিওর পরিবার এই হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর জন্য তার সহযোগী ফার্মকে নিযুক্ত করেছেন। ইতিমধ্যেই তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বডি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। সবকিছু তাদের ফার্মের বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখবেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী উইন রোজারিওর হত্যার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছেন স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল। পাশাপাশি আমাদের ফার্মও তদন্তে নেমেছে। ন্যায়বিচারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে লড়ে যাবো।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রবাসী বাঙালি খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি গ্যাব্রিয়েল তাপস গমেজ, বিকাশ গমেজ, লুথারেন চার্চের প্যাস্টও জেমস রয়, দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ‘স্যাফেস্ট’র প্রধান নির্বাহী মাজেদা এ উদ্দিন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট এএফএম মিসবাহুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট সুখেন গোমেজ।
১৯ বছর বয়সী নিহত বাংলাদেশি আমেরিকান উইন রোজারিওর বাড়ি গাজীপুরের পূবাইলের হারবাইদ গ্রামে। সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে নিউইয়র্কে একইস্থানে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন গাজীপুর জেলা অ্যাসোসিয়েশন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ দুপুরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ওজোন পার্কে নিজ বাসা থেকে পুলিশকে ফোন করে সাহায্য চান উইন রোজারিও। নিহতের বাবার দাবি, ফোন পেয়ে পুলিশ তাদের বাসায় গিয়ে মায়ের সামনেই ছেলেকে ৬ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে। পরে উইন রোজারিওর মানসিক সমস্যার কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এমন একজনকে কেন গুলি করে মারতে হলো এমন প্রশ্ন উঠছে স্থানীয় কমিউনিটিতে। যদিও পুলিশের দাবি, উইন রোজারিও কাঁচি নিয়ে তাদের মারতে উদ্যত হয়েছিল।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক উইন রোজারিওর বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা। তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে পুলিশের দোষ প্রমাণ হলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশা করি।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।