শায়েস্তা করার পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে হত্যা
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২৪ মঙ্গলবার
শেরপুরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দ্বৈত নাগরিক আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) বাবা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ছাড়া তাঁর আরেক প্রবাসী ভাই ও পরিবারের কয়েকজন সদস্যও এ পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোনালিসা বেগম। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে তাঁর বাবা।
পুলিশ সুপারের ভাষ্য, এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড জীবনের বাবা সাইদুর রহমান সুরুজ এবং চরপক্ষীমারী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সাবেক চেয়ারম্যানসহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলো– ডাকপাড়া গ্রামের মোবারক ওরফে মোস্তাক (৩২) ও কালু মিয়া (২৫), শেরপুরের পূর্বশেরী মহল্লায় বসবাস করা সিরাজগঞ্জের শ্রীফলতলা গ্রামের রূপা বেগম (২৮), কান্দাশেরীচর গ্রামের মনোয়ারা বেগম (৪০) ও রকিব হোসেন জিহাদ (২০)। এর মধ্যে রূপা ও মনোয়ারা সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রবাসী হত্যার ঘটনায় তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সদর থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
প্রায় ২৫ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দু’বছর আগে জীবন দেশে ফেরেন জানিয়ে পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম বলেন, প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। এ নিয়ে বাবা-মার সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধ চরম আকার নিলে বাবা চারটি মামলা করেন ছেলের বিরুদ্ধে। ছেলে ও তাঁর স্ত্রীও বাবার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় বাবা দেড় মাস কারাভোগ করে এক সপ্তাহ আগে জামিনে বের হয়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রবাসী ছেলের বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে।
পুলিশ সুপার বলেন, শাহিন তার ব্যবসায়িক অংশীদার আব্দুর রউফকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। রউফ তার সহযোগী কালু, ময়নাল, জিহাদ ও মোবারককে ডেকে জীবনকে শায়েস্তা করার নির্দেশ দেয়। পরে কালু তার পরিচিত মনোয়ারা ও রূপার সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে। এর মধ্যে রূপাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলতে। তাঁকে পটিয়েও ফেলে।
জীবনকে এনে দেওয়ার জন্য রূপার সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান রউফ ৫০ হাজার টাকার চুক্তি করে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত শনিবার (৩০ মার্চ) জীবনকে চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্যাঙের মোড়ে আসতে বলে রূপা। তিনি এলে কৌশলে তাঁকে রউফ ও তার সহযোগীদের হাতে তুলে দেয়। পরে চুনিয়ার চরের একটি ঘরে আটক রেখে তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে সাজানো হয় অপহরণের নাটক।
একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে জীবনের দ্বিতীয় স্ত্রী আতিয়া আক্তারের কাছে ৯৩ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসামিরা। এরপর গভীর রাতে চুনিয়ার চরে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে নিয়ে পিটিয়ে তাঁর পা ভেঙে ফেলে। পরে ছুরিকাঘাতে জীবনকে হত্যা করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, নিহত প্রবাসী শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় কালু ও জিহাদ আহত হয়। তারা পরে ময়মনসিংহে চিকিৎসা নিয়েছে। রোববার প্রবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মোনালিসা বেগমের ভাষ্য, পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দেন চরপক্ষীমারী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে এ হত্যার ক্লু পান তারা। এ ব্যাপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন। রউফের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে সব প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি জানান।