রোববার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩১   ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আর্তমানবতার সেবায় উজ্জ্বল নাম ড. হোসনে আরা বেগম

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৭ এএম, ৬ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার

বগুড়ার ঠেঙ্গামারা মহিলা যুব সংঘ

 
 
বাংলাদেশে আর্ত মানবতার সেবায় আত্মোৎসর্গকারী এক উজ্জ্বল মুখচ্ছবি প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগম। প্রায় ২৬ বছর ধরে তিনি নিজেকে উৎসর্গ রেখেছেন আর্ত মানবতার সেবায়। মানব কল্যাণে কাজ করে চলেছেন বিরামহীনভাবে।
ড. হোসনে আরা অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন বগুড়ার ঠেঙ্গামারা মহিলা যুব সংঘ। বিশ্বজুড়ে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। দুজন মহিলা ভিক্ষুকের স্বপ্নকে লালন করে আজ তা ৪১ হাজার কর্মী বাহিনীর জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বগুড়া সরকারি কলেজ, মহিবুর রহমান মহিলা কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ও জয়পুরহাট মহিলা কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। একই সঙ্গে একনিষ্ঠ সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন ঠেঙ্গামারা মহিলা যুব সংঘ গড়ে তুলতে।  
সম্প্রতি লং আইল্যান্ডে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা আসেফ বারী টুটুলের বাসভবনে এক অনানুষ্ঠানিক ইফতার পার্টিতে ড. হোসনে আরা বেগম তার ঠেঙ্গামারা মহিলা যুব সংঘের যাত্রা ও সাফল্যের কথা বর্ণনা করছিলেন। শতাধিক অতিথি মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলেন। অতিথিদের মধ্যে আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রানো নেওয়াজ, মূলধারার রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ, রিয়েলটর ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নুরুল আজিম, আলমগীর খান আলম সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়ার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে ড. হোসনে আরা বেগমের জন্ম। সমাজসেবার ব্রত নিয়েই তার বেড়ে ওঠা। কর্মের জন্যই পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড, অশোকা ফেলো, রোটারী ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার, এম এ হক গোল্ড মেডেল, ফিসারিজ এওয়ার্ড ও মাইডাস এওয়ার্ড প্রভৃতি।
ঠেঙ্গামারা মহিলা যুব সংঘ ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও মূলত ১৯৮০ সালে হোসনে আরার নির্বাহী পরিচালনাতেই ১৯৮০ সালে এর বিস্তার ঘটে। সংগঠনটি আজ বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ডিএফআইডি, নেদারল্যান্ডস গভর্নমেন্ট, স্মাইল অ্যান্ড ইউএস-সহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো বেসরকারকারি এই সংস্থাকে সাহায্য করে আসছে। দেশে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, রানাতুঙ্গা হসপিটাল, ফাইভ স্টার মেমো জন হোটেল রিসোর্ট, দুটি সিএনজি স্টেশন, তিনটি পেট্রল পাম্প, বহুতল ভবন তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রয়, রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মাইক্রো ফাইন্যান্সের মাধ্যমে ৫৩ লাখ পরিবার উপকৃত হয়েছে। তিনি বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণসহ আমরা সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ দান করে থাকি। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাতেই টিএমএসএসের শাখা রয়েছে। ৪১ হাজার অফিস কর্মচারী রয়েছেন। দেশের ছোট-বড় এক লাখ ১২ হাজার সমিতি টিএমএসএসের আওতাভুক্ত।’
১৯৬৪ সালে বগুড়া জেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের ফাতেমা বেওয়া এবং জোমেলা বেওয়া নামক দুজন ভিক্ষুকের নেতৃত্বে স্থানীয় ভিক্ষকরা সংগঠিত হয়। ভিক্ষার চাল জমানোর মধ্য দিয়ে তাদের সঞ্চয় তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর দেশের ৬টি গ্রামে এ ধরনের ১৪টি মহিলা দল গঠিত হয়।
পরবর্তীতে এই মহিলা ভিক্ষুক দলগুলোকে সংগঠিত করে ড. হোসনো আরা বেগম তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। ১৯৮০ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ’। সংগঠনটি পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তখন এর সাধারণ সদস্য ছিল ২২৬ জন। এটি দরিদ্র ও দুস্থ নারীদের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন হিসেবে নিবন্ধিত হয় এবং অতি অল্পসময়ের মধ্যে এটি দরিদ্র মহিলাদের বৃহত্তম এনজিওতে পরিণত হয়েছে।
টিএমএসএস প্রশিক্ষণ, ক্ষমতায়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গ সম্পর্ক উন্নয়ন, কৃষি, মৎস্য ও বনায়ন, দরিদ্রদের স্বার্থে গণতন্ত্র সংহতকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পল্লী উন্নয়নের মতো বহুবিধ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৪১০টি গ্রামে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনটির কর্মী সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার।