টাইমস স্কয়ারে অভাবনীয় দৃশ্য
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:১৮ এএম, ২০ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার
উৎসব মুখরতায় সহস্রকন্ঠে বাংলা নববর্ষকে বরণ
এ ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য। বাংলা বর্ষ বরণে গত শনিবার পুরো টাইমস স্কয়ার দখলে নিয়েছিল বাংলাদেশিরা। সারা বিশ্বের মানুষের অতি পরিচিত ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ার, ইংরেজি বর্ষবরণে যেখানে নতুন বছরের প্রথম প্রহরে বল ড্রপিং দেখতে শত শত মানুষের ভীড় জমে সেই টাইমস স্কয়ার হাজারো বাংলাদেশির সমাগমে মুখর হয়ে উঠেছিল বাংলা নববর্ষ উদযাপনে। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার বাংলা বর্ষবরণের উৎসবে মেতে উঠল টাইমস স্কয়ার। এখানে গত বছর থেকে শুরু হয়েছিল এই উৎসব উদযাপন।
বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্কের এই টাইমস স্কয়ারে প্রবাসী বাঙালিরা নববর্ষকে বরণে আয়োজন করেছিল নানা অনুষ্ঠানের। এদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টাইমস স্কয়ার হয়ে ওঠে শ্বাশত বাঙালির এক মহামিলন কেন্দ্র।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড আয়োজিত এই উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে সময় মিলিয়ে বিকেলে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়া অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নাট্যানুষ্ঠান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল সহ¯্র কন্ঠে বর্ষবরণের গানের আয়োজন।
টাইমস স্কয়ারে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আয়োজনের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম এবং স্বাগত বক্তব্য দেন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’র প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, আইএফআইসি ব্যাংকের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশন সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার, শাহ নেওয়াজ গ্রুপের প্রধান এবং গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ারের সিইও ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক শাহ্ নেওয়াজ, এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রানো নেওয়াজ, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাসার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, থ্যাইল্যান্ড এবং নেপালের কনসাল জেনারেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন শামীম আল আমিন, ফাতেমা শাহাব রুমা, মৃদুল আহমেদ ও এলভিস।
রাত এগারোটা পর্যন্ত অব্যাহত থাকা এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল ও থ্যাইল্যান্ডের শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। উৎসবে ছিল শিশুদের নিয়ে বিশেষ পরিবেশনা। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন রানো নেওয়াজ, শাহ মাহবুবসহ অনেকে। সহ¯্র কন্ঠে সংগীতে নেতৃত্ব দেন মহিতোষ তালুকদার তাপস।
ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম রাত পৌনে ১০টায় টাইমস স্কয়ারের মঞ্চে বেশ কয়েকটি সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘কনকনে শীতের মধ্যে হাজার দশেক মানুষ আমার গান শুনতে দাঁড়িয়ে আছেন; এটা আমার জন্য অসম্ভব রকম সম্মানের।’ পরিবেশনা ছিল শিল্পী পার্বতী বাউলের।
উৎসবের উদ্বোধন করে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, টাইমস স্কয়ারে হাজারো বাঙালির উপস্থিতিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং সহ¯্র কণ্ঠে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বাঙালি অভিবাসীরা, তা অবিস্মরণীয়। এভাবে বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্বময় উদ্ভাসিত করতে, জাগ্রত রাখতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সরব থাকতে হবে।
লায়লা হাসান বলেন, বাংলা সংস্কৃতি, কৃষ্টির সঙ্গে প্রবাসী প্রজন্মকে জড়িয়ে রাখার এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমাদের দেখিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সামনের দিনগুলোতে নতুন প্রজন্ম ধারণ ও লালনে উৎসাহিত হবে বলে আশা করছি।
কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই আয়োজন আগামী প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতিচর্চায় উদ্বুদ্ধ করবে।
শাহ আলম সারওয়ার বলেন, আমেরিকার অভিবাসীরা টাইমস স্কয়ারে যে অভূতপূর্ব আয়োজন করেছেন, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের কর্তধার, সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক শাহ্নেওয়াজ বলেন, ‘আমেরিকায় বাংলাদেশিরা স্বতন্ত্র একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। টাইমস স্কয়ারের বিশাল এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে পেরেছি।’
আয়োাজক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, গত বছর আমরা শত কণ্ঠে নতুন বছরকে বরণ করেছিলাম, এবার বরণ করেছি সহ¯্র কণ্ঠে। এ আনন্দ আয়োজন অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে শিল্পী ও দর্শনার্থীরা অংগ্রহণ করেছেন। আবহমান বাংলার ঐহিত্যবাহী সংস্কৃতি, নাচ গান ও যাত্রাপালা, কোনো কিছুই বাদ ছিল না আমাদের আয়োজনে।
টাইমস স্কয়ারের আয়োজনে সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন, প্রধান সমন্বয়কারী শিবলী সাদেক, তানভীর আহমেদসহ অনেকে।
দ্বিতীয় দিন ১৪ এপ্রিল জ্যাকসন হাইসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এই বর্ষবরণ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান হয়। এদিনও অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ১১টায় শেষ হয় মধ্যরাতে। এদিনও মমতাজের গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
দুইদিনের অনুষ্ঠানে সংগঠনগত ভাবে অংশ নেয় শিল্পকলা একাডেমি ইউএসএ, প্রকৃতি, সংগীত পরিষদ, বহ্নিশিখা, রবীন্দ্র একাডেমি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান।