অনিশ্চয়তায় চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচন
মনোয়ারুল ইসলাম
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪৮ এএম, ৪ মে ২০২৪ শনিবার
অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভা হট্টগোল
আবারও অন্তর্কলহের কবলে পড়েছে প্রবাসীদের অন্যতম বৃহত্তম সংগঠন চট্রগ্রাম সমিতি। ২০২১ সালের পর থেকে কোন নির্বাচিত কমিটি না থাকা ও অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ সংগঠনটিকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠিত হলেও ১৮ মাসেও তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে না পারায় অভিযোগ দানা বেঁধে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে যে তারা বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে বসে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হন। এমনই এক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল গত ২৭ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সভায়।
ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় সংগঠনটির একটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। ১৯৯৭ সালে ভবনটি ক্রয় করার পর থেকে শুরু হয় এই ভবন নিয়ে মামলা। মামলা শেষ হলেও সংগঠনটিতে শুরু হয় নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, নির্বাচন না দেওয়া এবং সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ায় বারবারই সমিতিতে অচলাবস্থার তৈরি হয়।
গত ২৭ এপ্রিলের সভায় তর্কবিতর্কের পর এক পর্যায়ে কণ্ঠভোট নেওয়া হয়। কণ্ঠভোটে আগামী ২ জুন পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ এবং ১৫ জুনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ভোট প্রদান করেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন দুই সদস্য মোহাম্মদ তাহের এবং মীর কাদের রাসেল এই প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেন। তারা সাধারণ সভা ডাকবার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এতে সভায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই অনেকে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
চট্রগ্রাম সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম ২৭ এপ্রিলের সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন। তিনি জানান, বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। তবে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। সময়ের অভাবে সভা মুলতবী করা হয়েছে। এ মাসেই আমরা আবার বসবো। অন্তর্বর্তকালীন কমিটির মেয়াদ ১৫ জুন পর্যন্ত রয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। কার্যত নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর আমাদের কমিটির কোন কাজ থাকবে না। সেলিম বলেন, সদস্য সংগ্রহের সময়সীমা নিয়ে দ্বিমত ছিল। মীর কাদের রাসেল, নুরুল আনোয়ার ও মুনির আহমেদ আরও ৩ সপ্তাহ বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অন্যরা বলছিলেন, ৫ সপ্তাহ বাড়াতে। তবে আমি সভাপতি হিসেবে সদস্য সংগ্রহ ৪ সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব করলে সবাই মেনে নেন। আগামী ২৬ মে সমিতির সদস্য হবার শেষ দিন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৫০০ জন সদস্য হয়েছেন। এই এক মাসে তা অনেক বাড়বে। দেড় বছর আগে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি হয়েছে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জন্য। এত সময় নিয়েও কমিটি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জনাব সেলিম বলেন, আসলে কমিটি হয়েছিল নয় মাসের জন্য। এই সময়ের মধ্যে পুরো দায়িত্ব শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই সাধারণ সভা কওে কমিটির মেয়াদ আরও নয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এই বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে ১৫ জুন। আশা করছি, এর মধ্যেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সমিতির ১৫ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির অন্যতম সদস্য মাকসুদ এইচ চৌধুরী বলেন, কন্ঠভোটে মেজোরিটির মতামতকে আমলে না নিয়ে তিন জন সদস্য সভায় হট্রগোল করেন। তিনি বলেন, গত চার মাস কোন বৈঠক হয় নি। এভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেবার চক্রান্ত হচ্ছে। আমরা পুরনো কোন প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপ চাই না। তথাকথিত মুরুব্বিরাই আমাদেও সমস্যা। তাদের সন্মান দেখাতে গিয়েই যত সমস্যা হচ্ছে। ১৫ জুনের মধ্যে নির্বাচিত কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে মাকসুদ চৌধুরী বলেন, মোটেই সম্ভব নয়। ভোটার তালিকাই চুড়ান্ত হয় নি। নির্বাচন কমিশনকেও ৬০ দিন সময় দিতে হবে। সাব কমিটিগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো না। সভায় হট্টগোল প্রশ্নে তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরায় সব ধরা আছে। আমি তা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। এতে চট্টগ্রামবাসী দেখতে পারবেন বৈঠকে কে কারা হট্রগোল করেছে।
২৭ এপ্রিলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাকসুদ এইচ চৌধুরী, মনির আহমেদ, মাহবুবুর রহমান,আহসান হাবিব,মুক্তাদির বিল্লাহ,সুমন উদ্দীন,জয়নাল আবেদীন আতিক,কাশেম, মোহাম্মদ হারুন,নুরুল আনোয়ার,মীর কাদের রাসেল, আবু তাহের ও মোহাম্মদ সেলিম।