কৃষ্ণা কাবেরী হত্যায় জহিরুলের ফাঁসির রায়
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩৫ এএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার
রাজধানীর আদাবরে প্রায় চার বছর আগে কলেজ শিক্ষক কৃষ্ণা কাবেরী হত্যায় একমাত্র আসামি কেএম জহিরুল ইসলাম পলাশের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশিপাশি তাকে এক লাখ টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এ ছাড়া কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী ও সন্তানদের ওপর হামলার দায়ে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক থাকায় জহিরুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। জহিরুল গুলশানের ব্রোকারেজ হাউস হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপক।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী সীতাংশু শেখর বিশ্বাস। রায়ের পর আদালতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দণ্ডিতকে গ্রেফতার করে দণ্ড কার্যকর করা হোক।
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বলেন, মামলার একমাত্র আসামি জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ২০ এপ্রিল এ হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। অভিযোগ গঠনের পরপরই আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছেন। ফলে এ মামলায় আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি। মামলায় মোট ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন আদালত।
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ভাড়া বাসায় হামলায় মারাত্মক আহত ও দগ্ধ হয়ে পরদিন হাসপাতালে মারা যান আদাবরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডল (৩৫)। তার স্বামী সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বিআরটিএ’র প্রকৌশল বিভাগের উপ-পরিচালক (বর্তমানে পরিচালক-অপারেশন) ছিলেন। ঘটনার পর তার বড় ভাই সুধাংশু শেখর বিশ্বাস জহিরুল ইসলাম পলাশকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৩০ মে আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন।
চার্জশিটে বলা হয়, সীতাংশু বিশ্বাস হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। সেখানে আট লাখ টাকা ছিল। শেয়ার ব্যবসার সূত্রেই জহিরুলের সঙ্গে সীতাংশুর পরিচয়।
সীতাংশুর শেয়ার আত্মসাৎ করার জন্য তাকে হত্যার চেষ্টা করেন জহিরুল এবং তার হামলায় কৃষ্ণার মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর সীতাংশু কুমার বিশ্বাসের ইকবাল রোডের বাসায় তার জন্য জন্মদিনের কেক, মিষ্টি ও মোমবাতি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যান জহিরুল।
কেক কাটার পর কৌশলে সীতাংশুকে চেতনানাশক মেশানো ফলের জুস খাইয়ে অচেতন করে তিনি হাতুড়িপেটার চেষ্টা করেন। তখন কৃষ্ণা বাধা দিতে গেলে তিনি স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই এলোপাতাড়ি পেটান। পরে মোমবাতি থেকে কৃষ্ণার শাড়ি ও ঘরে আগুন ছড়িয়ে যায়।
দগ্ধ কৃষ্ণাকে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কৃষ্ণার দুই মেয়েও আঘাত পান। এ মামলায় জহিরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।